নূরনগরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা নার্সিং স্টাফ ও কর্মচারীদের দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এনেস্থেশিয়া বিভাগে বসে তিনি করোনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন খুলনার বিভিন্ন থানার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ অফিসারকেও। এরপর নিজেও ছুটে গিয়েছেন করোনা হাসপাতালে । সরাসরি রোগীদেরও সেবা দিয়েছেন। তবে যুদ্ধে নামলে তো আক্রান্ত হবেই। রোগীর সেবা করতে গিয়ে নিজেও আক্রান্ত হন প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে। ভর্তি থেকেছেন হাসপাতালেও।তবে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে আবারও শুরু করেছেন মানব সেবা। বলছি ডাঃ সুহাস হালদারের কথা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার তিনি।
ডাঃ সুহাস হালদার। ২০১৫ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনেস্থেশিয়া বিভাগে যোগদান করেন সহকারী রেজিস্ট্রার হিসাবে। এই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ করেনা হাসপাতালের সমন্বয়কারী হওয়ার কারণে তিনিও অনেক দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। সহকারী রেজিস্ট্রার হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও দায়িত্বের বাইরে করোনা হাসপাতালে যে কর্মচারিরা দায়িত্ব পালন করেছেন এ যাবৎ, তাদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ডাঃ সুহাস হালদার। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেন্থেশিয়া বিভাগে বসে এ প্রশিক্ষণ দেন তিনি। একজন রোগীর অক্সিজেনের জন্য সিলিন্ডার ব্যবহার, ফ্লুমিটার খোলা ও লাগানো, তাকে ক্যাথেটার পড়ানো, ক্যানোলা লাগানো। আইসিইউ রোগীদের জন্য বিশেষযত্ন নেয়ার প্রশিক্ষণ দেন তিনি। এছাড়া আইসিইউ রোগীদের ভেন্টিলেশন এবং হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেন কর্মচারী ও নার্সিং অফিসারদেরকে।
করোনার প্রকোপ শুরু হলে সর্বত্র যখন একটি ভীতিকর অবস্থা তখন তিনি খুলনার বিভিন্ন থাকায় কর্মরত পুলিশ অফিসার ও সদস্যদেরকে করোনার মধ্যে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ বিধি মেনে কিভাবে দায়িত্ব পালন করা যায় তার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এই প্রশিক্ষণে খুলনার ৯টি উপজেলার থানার পুলিশ সদস্য ছাড়াও মহনগরীর বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যও অংশ গ্রহণ করেন। এতেই তিনি খান্ত হননি। নিজে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের। যুদ্ধে নামলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তিনিও আক্রান্ত হয়েছিলেন মরণঘাতি এ ভাইরাসে। তার আক্রান্ত হওয়ার খবরে ভেঙ্গে পড়েছিলো তার সিনিয়র সহকর্মী ও শিক্ষক ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে অত্যন্ত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন এই চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে চলার কারণে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে যান। তবে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে ভয়ে এক কেন্দ্রিক না থেকে আবারও শুরু করেন তার যুদ্ধ। একাধারে প্রতিদিনই অপারেশন টেবিলের পশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন এই মানবিক চিকিৎসক।
ডাঃ সুহাস হালদার বলেন, আমি জানতাম আমি যেভাবে এক্সপোজ হচ্ছি নিশ্চই আক্রান্ত হবো। শরীর একটু ভারী থাকায় আমার সিনিয়ররা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। কিন্তু যুদ্ধে যখন নেমেছি আক্রান্ত হওয়ার মানসিকতা নিয়েই প্রতিদিন রোগীদের কাছে যেতাম। তবে হেরে যাইনি। সকলের দোয়ায় ফিরে এসেছি মানুষের সেবায়। সামনের দিন গুলিতেও এভাবে মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ/এমএম