করোনা ভাইরাসের মহামারী সংক্রমণ ও ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে দেশের বিভিন্ন অংশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতে বহুবিধ নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ধর্মীয় উৎসব, নিত্য ও পারিবারিক প্রয়োজনীয়তাসহ আরো বিভিন্ন বাস্তবিক কারণ বিবেচনায় ভ্রমণ এবং যানবাহন চলাচলের উপর আরোপিত এ নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞায় ধীরে ধীরে শৈথিল্য দেখা দেয়। কিন্তু একইসাথে এই শৈথিল্য যে করোনা সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলেছে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তাই আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি প্রয়োজনের সাথে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি হ্রাসকে সমন্বিত করে নিরাপদ বাস, গাড়ি, ট্রেন বা লঞ্চ ভ্রমণের পূর্বে, ভ্রমণের সময়ে ও ভ্রমণের পরে কিছু কিছু বিষয় ও স্বাস্থ্যবিধি আবশ্যিকভাবে মেনে চলা উচিত।
ভ্রমণের পূর্বে যেসকল বিষয় আমলে নেওয়া উচিত : উপসর্গবিহীন করোনা সংক্রমণ বহুল বৃদ্ধি পাওয়ায় ভ্রমণকালে করোনা সংক্রমিত হওয়ার কিংবা অপরকে সংক্রমিত করার সম্ভাবনা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিনা কারণে, অযথা এবং বিশেষত যদি আপনি কিংবা আপনার ভ্রমণসঙ্গী অসুস্থ হন, করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয় বা বিগত ১৪ দিনের মাঝে কোনো করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন তাহলে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনার গন্তব্যস্থলে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কেমন বা করোনা ভাইরাস বিস্তারের চরম সীমায় রয়েছে কিনা অথবা রেডজোন কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত কোনো বিধি-নিষেধ রয়েছে কিনা এবং আপনি কিংবা আপনার ভ্রমণসঙ্গী অথবা আপনি যার সাথে সাক্ষাৎ করবেন- তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, হাঁপানি ইত্যাদি কোনো দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে ভুগছেন কিনা প্রভৃতি বিষয় ভ্রমণের পূর্বেই বিবেচনা করুন। আপনি দীর্ঘদিন যাবত কোনো ঔষধ সেবন করতে থাকলে ভ্রমণে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঐ ঔষধ সাথে নিচ্ছেন কিনা, ভ্রমণের পূর্বেই তা নিশ্চিত করুন।
ভ্রমণকালে যা খেয়াল রাখবেন : বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি গণপরিবহনের বিকল্প হিসাবে যদি আপনার নিজস্ব মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস প্রভৃতি যানবাহন সুবিধা থাকে, তাহলে এসময়ে ভ্রমণের জন্য নিজস্ব পরিবহনই ব্যবহার করা শ্রেয়। গণপরিবহন বা নিজস্ব পরিবহন যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, ভ্রমণকালে কতগুলি বিষয় অবশ্যই মেনে চলবেন।
বাসস্টপ, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, যাত্রাকালীন কিংবা যাত্রাবিরতিকালে ফুডপার্ক বা টয়লেটে সর্বত্রই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নাক-মুখ ঢেকে নিয়মমত মাস্ক পরিধান, কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, অযথা চোখ, নাক বা মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা, অসুস্থ ব্যক্তির নিবিড় সংস্পর্শে না আসা, সহযাত্রী থেকে ন্যূনতম তিন হাত দূরত্ব বজায় রাখা, যথাসম্ভব ফুডপার্ক থেকে খাবার ও পানি গ্রহণ না করে ভ্রমণকালে নিজের খাবার ও পানি নিজেই বহন করা প্রভৃতি বিষয় কঠোরভাবে অবলম্বন করা উচিত। লঞ্চ, বাস বা রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীসুরক্ষার জন্য যাত্রীদের মাস্ক পরিধান, যানবাহনে জীবাণুমুক্তকরণ কার্যক্রম, অনলাইনে টিকিট বিক্রয় কিংবা আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কিনা সে বিষয়ে যাত্রীদের পূর্ব থেকেই সচেতন থাকা আবশ্যক।
ভ্রমণ পরবর্তী সময়ে করণীয় : যাত্রাকালে অত্যধিক জনবহুল কোন স্থানে বা যানবাহনে ভ্রমণ করে থাকলে কিংবা সন্দেহজনক কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসলে নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভ্রমণ শেষে অন্যদের থেকে পৃথক থাকতে চেষ্টা করুন। অন্য কারো সংস্পর্শে যাওয়ার প্রয়োজনে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন ও মুখোমুখি যোগাযোগের সময় মোটামুটি ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট হোন। ভ্রমণ শেষে আপনার বা আপনার ভ্রমণসঙ্গী কারো করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করুন।
এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস (স্বাস্থ্য),
মেডিকেল অফিসার
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা।
খুলনা গেজেট / এমএম