খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা
যশোরে ৭৮ লাইব্রেরি মালিকের ব্যবসা পরিবর্তন

করোনায় বইয়ের ব্যবসায় ধস

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

যশোরে লাইব্রেরি ব্যবসায় ধস নেমেছে। করোনাভাইরাস এ ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ৭৮ জন্য ব্যবসায়ী তাদের বইয়ের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আর শতাধিক কর্মচারী হয়েছেন ছাটাই ও বেতন হয়েছে অর্ধেক। এ কারণে বই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টদের পরিবারে এখন হাহাকার বিরাজ করছে। তারা জানিয়েছেন, দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত তাদের ব্যবসা সচল হবে না।

ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, শহরের দড়াটানামোড় থেকে গরীবশাহ মাজার পর্যন্ত বই মার্কেট গত ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই মূলত বই ব্যবসায়ীদের কপালে শনিরদশা ভর করে। পরবর্তীতে তাদের শহরের মুসলিম একাডেমী স্কুল চত্বরে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে বই মার্কেট। নতুন করে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসায়ীরা ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এতেও তাদের শনিরদশা কাটেনি। ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন নতুন এ বই মার্কেটে তাদের ব্যবসা ভালভাবে চলবে। অথচ কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের কপালে ছাই পড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ও ১৮ মার্চ এ রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর এ মাস থেকেই দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে নতুন স্থানে দু’মাস ব্যবসা যেতে না যেতেই তাদের দোকানে করোনার প্রভাব পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের দোকান বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে।
এদিকে, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ব্যবসায় ধস নামা বই ব্যবসায়ীরা আজো ঘুরে দাড়াতে পারেননি। গত প্রায় এক বছরে বই ব্যবসা থেকে ঝরে গেছেন ৭৮ জন ব্যবসায়ী। বেঁচে থাকার জন্য তারা এ পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন বলে ব্যবসায়ী সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আরো অর্ধশত ব্যবসায়ী তাদের পেশা পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তাদের একটিই দাবি প্রায় এক বছর বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রæততম সময়ে খুলে দেয়া হোক।

যশোর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলায় তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৬০ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলা এলাকায় ৬০ জন ও শহরের নতুন মার্কেটে বইয়ের ব্যবসা করছেন ৩৫ জন। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন ১৮২ জন। বাকি ৭৮ জন করোনা মহামারিতে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তারা দোকান বন্ধ রেখেছেন বা অন্য ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে লোকসানের বোঝা বইতে বইতে ৭৮ জন তাদের ব্যবসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। এরমধ্যে যারা টিকে রয়েছেন তারাও গত এক বছর যাবৎ লোকসান গুনছেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা কর্মচারী ছাটাই করেছেন, আবার কেউ কেউ কর্মচারীদের বেতন অর্ধেকে নামিয়েছেন। তারা পুজি ভেঙ্গে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শতাধিক বই ব্যবসায়ী ও কর্মচারী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
যশোর মুসলিম একাডেমী স্কুল মার্কেটের বই ব্যবসায়ী আজিজিয়া লাইব্রেরির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, বই ব্যবসা করতে গিয়ে তারা সর্বশান্ত হয়েছেন। গত এক বছর তিনি পুজি ভেঙ্গে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতনসহ ব্যবসা চালিয়েছেন। দু’জন কর্মচারীর মধ্যে ইতিমধ্যে একজনকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। একজনকে দিয়ে কোনমতে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, দোকানে কোন বেচাকেনা নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকলে তাদের ব্যবসা চলে না। কেউ বই কিনতে আসছে না। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার চাপ না থাকলে কেউ লাইব্রেরির দিকে যায় না। এ অবস্থায় কতদিন তিনি এ ব্যবসায় টিক থাকবেন তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে হাসান বুক ডিপোর পরিচালক জসীম উদ্দীন বলেন, মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত তাদের ব্যবসা সচল হবে না। এ কারণে তিনি যশোরের বই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিচেনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগে দেশের বড় ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রণোদনা পেয়েছেন। কিন্তু সাধারণ বই ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা পায়নি। প্রকাশক কেউ কেউ এটা পেতে পারেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা পেলে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন। তিনি আরো বলেন, লোকসান কমাতে তারা কর্মচারী ছাটাই না করে বেতন অর্ধেক করে কোনমতে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তারপরও এ ব্যবসা চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দড়াটানায় থাকাকালীন বইয়ের সাথে খাতা, কলম, ক্যালকুলেটর, পেন্সিল ও  স্টেশনারি মালামাল বিক্রি করতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাঁশহাটায় আসার পর বই ছাড়া অন্য কিছু বিক্রি হচ্ছে না। এসব খরিদ্দাররা সবাই জামে মসজিদ লেন মুখী হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যশোর জেলা শাখার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও জনতা লাইব্রেরির মালিক জাকির উদ্দীন দোলন বলেন, বই ব্যবসায় ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তারা বর্তমানে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় চলতে না পেরে তারা ইতিমধ্যে ৭ জন কর্মচারীকে বিদায় জানিয়েছেন। আরো কয়েকজন প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। বই ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে সরকারি কোন অনুদান বা প্রণোদনা পাননি। তিনি নিজে শহরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করেও প্রণোদনার ঋণ পাননি। তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের বই বেচাকেনা ১০ ভাগও নেই। অথচ এখন বই বিক্রির পুরো সিজন। এ ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা তা নিয়েই এখন ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!