সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড এর ডাটা হতে আমরা জানতে পারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদরে ১৭% এর-ই নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।যার মধ্যে ৫০% রোগীর ম্যাকানিক্যাল ভেন্টিলেশন বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রয়োজন হয়। হাসপাতাল হতে ছাড়পত্র পাওয়া ২০% রোগীর মধ্যে ২৭% – এর পরর্বতীতে বিভিন্ন জটিলতাজনিত কারনে চিকিৎসা নিয়মিত করার প্রয়োজন হয়। ইতালি, আমেরিকা এবং চীনে এ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ক্রিটিকাল কেয়ার সারভাইভাল এর হার ১৬-২৭% । প্রাথমিক অবস্থায় যদিও এটাকে শ্বাসযন্ত্রের রোগ হিসাবে ধরা হত, বর্তমানে পরিস্কার যে এটি শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। কোভিড-১৯ এর কারনে শরীরের একাধিক অঙ্গ যেমন হার্ট, কিডনি, রক্ত, স্নায়ু প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত হতে পারে। যেসব রোগী নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে চিকিৎসা নেন তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার হার ১৪-৭৭% ।
গবেষণা হতে জানা যায়, আই সি ইউ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরবর্তী ৬ বছর র্পযন্ত কাজে ফেরার ক্ষেত্রে ব্যথা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে আবির্ভূত হয়। কোভিড-১৯ সারভাইভালদের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এর পেছনে বেশ কিছু কারন আছে। যেসব রোগী একুইট পেইন এ ভোগে তাদের ক্রনিক পেইন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আই সি ইউ তে ভর্তির সময় যাদের শরীরে ব্যথার অনুভুতি থাকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। দূর্ভাগ্যবশত কোভিড-১৯ রোগীর আই সি ইউ তে অবস্থানকালীন সময়ে তার শারীরিক ব্যথার বিষয়টি অবহেলিত থাকে।
কোভিড-১৯ সারভাইভার যারা আই সি ইউ তে অবস্থান করেন তারা দীর্ঘদিন যাবত নিশ্চল ও ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন এবং কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস এর সাহায্যে বেঁচে থাকেন ফলশ্রুতিতে তারা আই, সি, ইউ অর্জিত দুর্বলতার শিকার হন। এই দুর্বলতা দ্রুত তার অবস্থার অবনতি ঘটায়, অস্থি সন্ধির ব্যথা তৈরি করে, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিকে শক্ত করে দেয়। আই সি ইউ পরবর্তী রোগীদের মধ্যে শোলডার পেইন সাধারনভাবে দেখা দেয়। শ্বাসযন্ত্রে শ্বাসপ্রশ্বাসের উন্নতি সাধনের জন্য কোভিড-১৯ রোগীদের বারবার উপুড় করে শোয়ানোর একটি রীতি আছে এতে করে রোগীর ব্রাকিয়াল নার্ভ ও জয়েন্টে সমস্যা হতে পারে এবং রোগীর সফট টিস্যু (মাংসপেশি, লিগান্টে, টেন্ডন) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা পরবর্তীতে সার্বক্ষণিক মাস্কুলস্কলেটোল ও নিউরোপ্যাথিক ব্যথায় রুপ নেয়। নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যে উপর্সগগুলো দেখা যায় যেমন ঝিনঝিন ও অবস অনুভুতি উহা আই সি ইউ হতে ছাড়পত্র পাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫ বছর পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিবরন হতে জানা যায় তাদের মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, রক্তাল্পতা, নার্ভ পেইনের সমস্যা বিরাজমান থাকে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে একাধিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পলিনিউরোপ্যাথি তৈরি হতে পারে।
এটা পরস্কিার যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে রোগী বেশ কিছু বেদনাদায়ক লক্ষণের সহিত যুক্ত হয়। যার মধ্যে মাংসপেশির ব্যথা, হাড়রে ব্যথা, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং বুকে ব্যথা রয়েছে। আইসিইউ র্পযন্ত যেসব রোগী যায় না তাদের মধ্যে ও এসব সমস্যা বিদ্যমান থাকতে পার। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় দ্রুত হস্তক্ষেপ কোভিড-১৯ রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা কমাতে সহায়ক। এর মধ্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অন্যতম। রোগীর জন্য সহনশীল হয় এমন পুর্নবাসন প্রক্রিয়া আই সি ইউ পরবর্তী কোভিড-১৯ রোগীদরে জন্য উপকারি বলে প্রমাণিত হয়।
কোভিড-১৯ থেকে যেসব রোগী আরোগ্য লাভ করে তাদের মধ্যে যাদের শারীরিক সক্ষমতা বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ঘাটতি থাকে তাদেরই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যাদের একের অধিক সমস্যা থাকে যেমন শারীরিক, মানসিক অথবা সামাজিক তাদের সমন্বিত পুর্নবাসন চিকিৎসা প্রয়োজন। যেহেতু কোভিড-১৯ রোগী কতদিন যাবত সংক্রামক থাকবে এটি নিশ্চিত নয়, তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত হওয়া জরুরি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার প্রথম ছয় সপ্তাহে রোগীর প্রাত্যহিক র্কমকাণ্ডের সঙ্গে থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ তার সহনীয় মাত্রায় (নিম্ন থেকে মাঝারি তীব্রতায়) প্রয়োগ করতে হবে। ছয় সপ্তাহ পরে এক্সারসাইজ থেরাপি রোগীর কর্ম ক্ষমতার উপর নির্ভর করে প্রদান করতে হবে । শারীরিক র্কমকাণ্ডের পরবর্তী উন্নয়ন রোগীর শারীরিক সক্ষমতার পরিমাপের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। হাসপাতাল হতে ছাড়পত্র পাওয়ার পর রোগীর আরোগ্যের সময় দীর্ঘায়িত হলে (৩ মাসের বেশি) একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করবনে।
লেখকঃ মাস্কুলোস্কলেটোল (ম্যাকানিক্যাল) পেইন স্পেশালিষ্ট ও নির্বাহী পরিচালক, জিরো পেইন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। পরিচালক, কেপিআরসি, সোনাডাঙ্গা আ/এ(১ম ফেজ), খুলনা।
খুলনা গেজেট / এমএম