সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া ভাঙ্গন পয়েন্টের পর এবার হরিষখালী ভাঙ্গন পয়েন্টে চাপান দেয়া সম্ভব হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা তিনটার দিকে এই চাপান দিতে সক্ষম হয়। ফলে সম্ভব হয়েছে খোলপেটুয়া নদীর পানি আটকানা। শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমেই সুফল মেলায় বানভাসিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ২০ মে আম্পানে বিদ্ধস্ত হওয়ার পর দীর্ঘ নয় মাস ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণে নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যকর কিছুই হয়নি। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয় পাউবো নিয়োজিত ঠিকাদার, তবুও আটকানো যায়নি বাঁধ। এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে খোদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি জেরা করেন পাউবো’র কর্মকর্তাদের। মন্ত্রীর সামনে সরাসরি পাউবো’র গাফিলতি নিয়ে অভিযোগও তোলেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনও পাউবো’র কর্মকর্তা ও তাদের নিয়োজিত ঠিকাদারের কাজের পরিকল্পনা, ধীর গতিতে কাজ করা ও গাফিলতিসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। বার বার তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সর্ম্পকে অবহিত করেছেন। এরপরও কাজ চলছিল কচ্ছপ গতিতে।
এক পর্যায় স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেদের স্বার্থে ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে নেমে পড়েন। ফলে দীর্ঘ নয় মাস পর প্রতাপনগরের হরিষখালীতে বাঁধ মেরামত বা চাপান দেয়া হয়েছে। সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন প্রতাপনগরের বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষ। অবশেষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভুক্তভোগী বানভাসিদের হাতেই মিলল সমাধান। স্বেচ্ছায় ঝুড়ি কোদাল নিয়ে বাঁধ চাপান দিয়ে আটকে দেয়া হল খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানি। বাঁধ নির্মাণ কাজের সার্বিক সহযোগিতা করেছে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে কুড়িকাহুনিয়া ভাঙ্গন পয়েন্টের পর এবার হরিষখালী ভাঙ্গন পয়েন্টে চাপান দেয়া সম্ভব হয়েছে। দিনভার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সহাস্রাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে হরিষখালীর ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছে। এখন চলছে বাঁধ রক্ষার কাজ। রাতের জোয়ারে যাতে বাঁধের কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য এলাকাবাসী সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনে রয়েছে।
প্রতাপনগরের সবচেয়ে বড় ভাঙ্গন কুড়িকাহুনিয়া ও হরিষখালী পয়েন্টে চাপান দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো বাকি রয়েছে চাকলার ভাঙ্গন। সেখানে কাজ চলছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রেই সেটিও মেরামত করা সম্ভব হবে। তবে মূল ভাঙ্গন পয়েন্ট দু’টিতে বাঁধ নির্মাণ করায় গৃহহারা মানুষ এখন তাদের ঘরে ফিরতে পারবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত ২০২০ সালের ২০মে আম্পানের আঘাতে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কমপক্ষে ৮টি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় ইউনিয়নের পুরো এলাকা। প্রায় ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয় প্রতাপনগর ইউনিয়ন। বন্যায় গৃহহারা হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু দীর্ঘ নয় মাস ধরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের অঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ না হওয়ায় প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকায় নিয়মিত চলতে থাকে জোয়ার ভাটা। এর মধ্যে ছোট ছোট ভাঙ্গন পয়েন্ট গুলো মেরামত করা সম্ভব হলেও কুড়িকাহুনিয়া, হনিষখালী ও চাকলার ভাঙ্গন পয়েন্ট মেরামত করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে দীর্ঘ নয়মাস কঠিন সময় পার করার পর কুড়িকাহুনিয়া ও হরিষখালী পয়েন্টে চাপান দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো বাকি রয়েছে চাকলা।
খুলনা গেজেট/কেএম