খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত
  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

এক রাতেই নদী গিলেছে ভাটিয়াপাড়ার ২৫ দোকান

‌নিজস্ব প্রতি‌বেদক, গোপালগঞ্জ

এক রাতেই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকান মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার ভোর রাত ৩টার দিকে এ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ভাটিয়াপাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। এদিকে ভাঙ্গন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাজারের অন্তত ২৫ দোকান ভেঙে নদী গর্ভে হারিয়ে যায়। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও ভাঙ্গন রোধ করতে পারছেন না। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন দোকান মালিকরা। এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি প্রশাসন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠে এ ভাটিয়াপাড়া বাজার। এ বাজারে ভূষি মাল, পশু খাদ্য, পাটের গুদাম, রাখি মালের গুদাম, মিষ্টির দোকান, মোবাইলের দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাইকারী মালামাল বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনই গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে মালামাল কিনতে আসেন। এর আগে বেশ কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। বিগত ১৯৯৬ সালে ভাঙন কবলিত এলাকায় নদীর পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পুনরায় ভাঙন শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানঘর মালিকরা হলেন, শ্যামল কুমার সাহা, জিয়াউর রহমান জিয়া, আবির হোসেন, খোকন কাজী, হায়দার কাজী, হারুন কাজী, মোঃ শফিকুল ইসলাম, আশরাফউদ্দিন তারা মোল্লা, আবিবার কাজী, মোঃ মশিউর রহমান খান, শুশান্ত কুমার সাহা, আলতাফচৌদুরী, দিলিপ কুমার সাহা, অভিজিৎ সাহা, জাকির মোল্লা, সোহেল মোল্লা, চান মিয়া শরিফ, হিরণ কারিকর, শাহজাহান কাজী, রশিদ শেখ, রমিজ মোল্লা, বাবলু ঠাকুর।

ব্যবসায়ী আশরাফউদ্দিন তারা মোল্লা বলেন, তার গোডাউন নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে তার গোডাউনে থাকা পাট ও বাদাম নদীতে ভেসে গেছে। খবর শুনে এসে তিনি কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। এতে তার আনুমানিক দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

বীজ ব্যবসায়ী রমিজ মোল্লা বলেন, তার দোকানে ৫ বস্তা ধুনিয়া বীজ, ২ মন খেসারি কলাই বীজ, ২ মন মুশুরি ডাল বীজ, মাষ কলাই, কালোজিরা ও শস্য বীজ নদীতে ভেসে গেছে। এতে তার দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভাটিয়াপাড়া বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোকন কাজী বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ করে ভাটিয়াপাড়া বাজার এলাকায় মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙ্গত দেখা দেয়। এতে বাজার রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে মুহুর্তের মধ্যে অন্তত ২৫ টি দোকানঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে তিনি সহ অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ভাটিয়াপাড়া বাজার সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান জানান, ভাঙনে দোকান ঘর, মালামাল ও জমি হারিয়ে অনেক ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বাজার রক্ষা বাঁধটি প্রতি বছরই রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। আর এর জন্য বরাদ্দও রয়েছে। বাঁধটি আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এখানে কোন রক্ষণাবেক্ষণ কাজই করা হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই ভাটিয়াপাড়া বাজারের নদী সংক্ষরণ বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে মুহূর্তেই ২০/২৫টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি মসজিদসহ আরো বেশ কিছু দোকানঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছে। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙন রোধের। সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফইজুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় ছুটে এসেছি। ভাটিয়াপাড়া বাজার রক্ষা বাঁধের আনুমানিক আধা কিলোমিটার এলাকার আকস্মিকভাবে প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন নদী গ্রাস না করতে পারে। তার জন্য যা যা করার তা করা হবে।’

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!