খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৩
  কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
  আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ফখরুল-রিজভী-আমির খসরু
  ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণু হত্যা : একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

উপকূলের নারীদের সংগ্রামী জীবন

নিতিশ সানা, কয়রা

সব কিছু হারিয়ে উপকূলের নারীরা নদীতে কুমিরের মুখের আধার হয়ে রাত দিন জাল টেনে মাছ ধরে। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে তুলে দেয় সন্তানের মুখে এক মুঠো খাবার। হাড়ভাঙা কষ্টের টাকায় তৈরি করে ঘর। সর্বনাশা আইলা, সিডর, আম্পান,ইয়াস ও জাওয়াদে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কষ্টের টাকায় তৈরি ঘর। সিনেমা বা রুপকার গল্প নয় উপকূলের নারীদের জীবন সংগ্রাম এমনই।

জীবন সংগ্রামী এক নারী ময়না (২০)। দরিদ্র পিতার ঘরে জন্ম হওয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। ১৫ বছর বয়সে পরিবার তাকে বিয়ে দেয়। সেখানে প্রতিনিয়ত স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে হতো। বিয়ের পরে তার কোলে এলো এক কন্যা সন্তান। স্বামীর নির্যাতন বেড়ে যায় দ্বিগুন। এক পর্যায়ে স্বামী তাকে ছেড়ে দিলে চলে আসেন কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ গ্রামে বাবার ভিটায়। সেখানে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করতে পাশেই কপোতাক্ষ নদীতে মাছ ধরে তার জীবিকা নির্বাহ করেন।কষ্টের মধ্যেও চেষ্টা করেন কিছু সঞ্চয় করার।  ভয় কি তিনি জানেন না। বাঁচতে হলে সংগ্রাম করতে হবে এটা তার বিশ্বাস।

অপর সংগ্রামী এক নারী মরিয়ম (৪৫)।  উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে এক হতদরিদ্র্য পরিবারে জন্ম নিয়ে বুজতে শিখে কিশোর বয়সে নদীতে জাল টেনে বাবার সংসারে হাল ধরেন। বিয়ের পরে ভেবেছিলো এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু বিয়ের বছর দশেকের মধ্যে তার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। কোন সন্তান না থাকায় ঠাই হয় বাবার বাড়িতে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে আবারো শুরু করেন নদীতে জাল টানা।

সংসারের খরচ জোগাড় করতে  ‍সুন্দরবনে গিয়ে স্বামীকে খেয়েছে বাঘে। মাথা গোজার ঠাঁই টুকু কেড়ে বিয়েছে শাকবেড়িয়া নদী। এখন নদীতে জাল টেনে সংসার চালাতে হয়। স্বামী গেছে বাঘের পেতে আর আমি কুমিরের পেটে যাবো কিনা জানিনা। ভয় কি জিনিস জানি না। শুধু জানি আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করে যেতে হবে। কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার গোলখালি গ্রামের শরিফা খাতুন। তিনি থাকেন এখন সরকারি জমিতে। বছর দশেক আগে তার নিজের ভিটাবাড়ি ছিলো। ২০১২ সালে স্বামী মজিদ শেখ গোলপাতা কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যায়। পরের বছর শাকবাড়িয়া নদীর ভাঙনে তার ভিটা বাড়ি কেড়ে নেন। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। শাকবেড়িয়া নদীতে রেনুর পোনা ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসারে খরচ ও দুই সন্তানের লেখা পড়ার খরচ চালান তিনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!