মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান ষ্টারলিং এর পরিকল্পনায় খুন করা হয় উজ্জল কুমার সাহাকে। হত্যা মামলার মূল আসামি হত্যা প্রক্রিয়ায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। তা সত্বেও বিচারিক প্রক্রিয়ার রীতিনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দু’জন তদন্ত কর্মকর্তা ষ্টারলিংকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেন। তাদের দু’জনের প্রতি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন আদালত। বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলেও তার উত্তর আদালতে পৌঁছায়নি। সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক বহাল তবিয়াতে থাকলেও এস আই মো: সোহেল রানার পদাবনতি হয়েছে।
২০১২ সালের ৭ জুন মডার্ণ সী ফুডের ফিন্যান্স কর্মকর্তা উজ্জল কুমার সাহা দুর্বৃত্তের আঘাতে নিহত হন। তার মোবাইল ফোনের সিডিআর পর্যালোচনা করে দু’দিন পর মেহেদী হাসান ষ্টারলিং, মো: আরিফুল হক সজল, নাহিদ রেজা রানা ওরফে লেজার রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন আদালতে তারা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে।
সেদিন হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ষ্টারলিং আদালতকে জানায়, হত্যার তিনমাস আগে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উজ্জল কোম্পানীর চাকরী ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে আসার পর সে আমার পিতা, মাতা, স্ত্রী ও দুলাভাইযের কানভারী করত। এ নিয়ে ষ্টারলিং এর স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হয়। একপর্যায়ে স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যায়। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে উজ্জলের সাথে তার তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। উজ্জলকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল সে। এ বিষয়ে ষ্টারলিং কাছের বন্ধু নাহিদ রেজা ওরফে রানার সাথে যোগাযোগ করলে সে বলে তুই কোন চিন্তা করিস না। বিষয়টি আমি দেখছি। এ সময় সজল সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু রানা বলে উজ্জলকে শায়েস্তা করার জন্য যাকে পাঠানো হবে তারা তাকে চেনেনা। সে সময় সজল বলে আমি সকলকে চিনিয়ে দেব। সজল ভিকটিমকে আসামিদের চিনিয়ে দেয়। আর সে মোতাবেক আসামিরা উজ্জলকে হত্যা করে।
খুলনা অতিরিক্ত মহানাগর দায়রা জজ আদালতের এপিপি কাজী সাব্বির আহমেদ বলেন, আদালতে ১৬৪ ধারায় ষ্টারলিং এর স্বীকারোক্তি দেওয়া সত্বেও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদ্বয় কিভাবে অভিযোগপত্র থেকে মূল পরিকল্পনাকারীর নাম বাদ দেন। বিষয়টি নজরে আসলে তিনি মামলাটি পুন: তদন্তের জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্ব স্ব উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আদেশ প্রদানের জন্য আদালতে দু’টি পৃথক আবেদন দাখিল করেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিলে সে মোতাবেক স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে পত্র পাঠানো হলেও সে পত্রের জবাব আজও আদালতে আসেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআইয়ের তদন্তের মাধ্যমে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য সরাসরি চলে যায়।
অভিযোগপত্র থেকে মেহেদী হাসান ষ্টারলিং এর নাম কর্তনের ব্যাপারে খুলনা থানার এসআই মো: সোহেল রানা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। সোহেল রানার পদাবনতি হয়েছে। বর্তমানে বয়রা রিজার্ভ ফোর্স অফিসে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
আদালতের নির্দেশে সিআইডি পরির্দশক শেখ শাহাজাহান দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনিও পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান ষ্টারলিং এর নাম বাদ দিয়ে একই চার্জশিট দাখিল করেন। জানতে চাইলে তিনিও একই কথা বলেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল ডিবিতে কর্মরত আছেন।
পরবর্তীতে তদন্তভার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো: আমিনুল ইসলামের উপর অর্পন করা হয়। তদন্তকালে তিনি আসামিদের জবানবন্দি ও মামলার যাবতীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন, মেহেদী হাসান ষ্টারলিং এর পরিকল্পনায় উজ্জলকে অন্যান্য আসামিরা হত্যা করে। আদালতে ষ্টারলিংসহ পাঁচজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তারা কিভাবে তার নাম কর্তন করল তা তার বোধগম্য নয়। তবে মামমাটি প্রথম থেকে পরিচর্যার অভাব ছিল। সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে এ রকম ঘটনা ঘটতো না বলে তিনি জানান।
গত ৪ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে খুলনার বহুল আলোচিত মডার্ণ সী ফুডের সাবেক ফিন্যান্স অফিসার উজ্জল কুমার সাহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মডার্ণ সী ফুডের মালিকের ছেলে মেহেদী হাসান ষ্টারলিংসহ পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামি কারাগারে রয়েছে।