খুলনা মহানগরীর ইস্টার্ণগেট মশিয়ালীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে নিজেদের সম্পৃক্ততা বিবরণ দিয়েছে মূল অভিযুক্ত শেখ জাকারিয়া সহোদর। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আতিকুস সামাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে মিল্টন। এরআগে সোমবার (১৯ অক্টোবর) জাকারিয়া ও রেজওয়ান শেখ রাজু ১৬৪ধারায় জবানবন্দী দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক এসমব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, ট্রিপল মার্ডারে মূল অভিযুক্তরা দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেও শঙ্কা কাটছে না এলাকাবাসীর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিন মাসেরও অধিক সময়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। প্রতিবাদে উত্তাল এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মামলাও করেছে আসামী পরিবার। এতে অজানা শঙ্কায় ভুগছেন প্রতিবাদীরা।
সূত্রমতে, গত ৯ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার মূল আসামী বহিস্কৃত আ’লীগ নেতা শেখ জাকারিয়া, তার ভাই মিল্টন ও আরেক আসামী রেজওয়ান শেখ রাজুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। দীর্ঘদিন তারা পলাতক ছিল। এরমধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র ছিল অত্যাধুনিক। সেই অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। তারমধ্যে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আসামী পরিবারের পক্ষ থেকে হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া এবং হয়রানিমুলক মামলা ঠুকে দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানিয়েছেন, মামলাটির মূল অভিযুক্তসহ এজাহারভুক্ত ২২ আসামীর মধ্যে ১৩ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে। গত ১৬ জুলাই মশিয়ালী এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এঘটনার পর শেখ জাকারিয়া আত্মগোপন করে। অনেকদিন চেষ্টার পর জাকারিয়াকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোম ও মঙ্গলবার তারা দু’ভাই আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে আদালতে। তাদের হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র আছে কি না, সে বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। এতে এলাকাবাসীর ভীতুসন্ত্রস্ত হবার কিছু নেই।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানিয়েছেন- ওইদিন হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এরমধ্যে হত্যাকারীদের পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকার প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করেছে। এতে অজানা আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রাতে খুলনা মহানগরীর ইস্টার্নগেট এলাকায় শেখ জাকারিয়া বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের মশিয়ালী গ্রামের মৃত বারিক শেখের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই গ্রামের মোঃ ইউনুচ আলীর ছেলে গোলাম রসুল (৩০)। এসময়ে গুলিবিদ্ধ হন মোঃ সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম পরদিন সকালে মারা যান। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে মারা যায় জাকারিয়ার চাচাতো ভাই জিহাদ শেখ। এছাড়া হত্যাকারী সন্দেহে কয়েকজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। পরে নিহত মোঃ সাইফুল ইসলামের পিতা মোঃ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় ২২জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫-১৬জনকে আসামী করে মামলা দায়ে (যার নং-১২, ১৮-৭-২০২০ইং) করেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন