দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সোমবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বেশ কয়েক বছর ধরে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ওই সময় মাছ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ ছিল।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করায় ৪৯টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা ও ১ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেরা ২০ কেজি করে চালের সহায়তা পেয়েছেন। খুলনা জেলার ৩ উপজেলায় এই সহায়তা পেয়েছেন ২ হাজার ১শ’ জেলে। এর মধ্যে দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার, বটিয়াঘাটায় ৭০০ ও দিঘলিয়া উপজেলাতে সহায়তা পান ৪০০ জেলে। এজন্য ২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ইলিশ গবেষকেরা বলছেন, ইলিশ মূলত সারা বছরই ডিম দেয়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-এই দুই মাসের চারটি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে অক্টোবরের দুটি অমাবস্যা-পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হয়। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর প্রতিবছরের পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন ৮ মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। দুই ধাপের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ইলিশ উৎপাদন যেভাবে বেড়েছে, তেমনি ওজন-আকারেও বেড়েছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশ রক্ষায় সরকার ও মৎস্য বিভাগ এবং জেলে ও ব্যবসায়ীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি যত্নশীল হয়েছেন। আগে ইলিশ সংরক্ষণ, এর জীবনাচার নিয়ে দেশে তেমন কোনো গবেষণা, পরিকল্পনা ছিল না। এখন নানামুখী কাজ হচ্ছে, গবেষণা করে নতুন নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করা হচ্ছে। এসব তথ্য যাচাই করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইলিশের অভয়াশ্রম বাড়ানো হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়িভাবে মানা হচ্ছে। এ সময়ে জাটকা ও মা ইলিশ ধরা প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফলে ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারছে। এতে পোনা ও জাটকা বেড়ে ওঠার পরিবেশ পাচ্ছে। দেশের নদ-নদীতে সারা বছর ইলিশ মিলছে। একইভাবে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাও সুফল দিচ্ছে।
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এসময় ৫১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৩৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০’ল মিটার অবৈধ জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। ৪৯টি মামলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম। এছাড়া ১ জন জেলেকে হাতানাতে ধরে কারাদণ্ড প্রদান করেন। ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলের ইলিশ অতিমাত্রায় আহরণ থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং তা বড় হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদন অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে। তাছাড়া ৪০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে। এতে ইলিশের পাশাপাশি অন্য মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পেয়ে সেসব উৎপাদনও আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে।