কখনো আইনজীবী ও কখনো সাংবাদিক পরিচয়ধারী আদালত চত্বরের প্রতারক ইদ্রিস আলমসহ তিনজনকে আইনজীবী সহকারী সমিতি (মোহরার) থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। একই সাথে আদালত চত্ত্বরে তাদের দেখলেই টাউট হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশে সোপর্দ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ইদ্রিসের পরিচয়পত্রও জব্দের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। বহিস্কৃত অপর দু’জন হলেন আইনজীবী সহকারী নজরুল ইসলাম ও নাজমুল হোসেন বিপুল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভায় অংশ নেয়া কয়েকজন জানান, সোমবার দুপুর দেড়টায় জেলা আইনজীবী সমিতির ১ নং ভবনের সেমিনার কক্ষে এ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতেই সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর আলম শাহীন টাউট ইদ্রিস আলমসহ অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয় তুলে ধরেন। একই সাথে এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এরপর অন্যান্য সদস্যরা এসব অভিযোগের বিষয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া তারা যাতে আদালত চত্ত্বরে না আসতে পারেন, সে বিষয়ে সুপারিশ করেন কমিটির অন্য সদস্যরা। এক পর্যায়ে সর্বসম্মতি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই তিনজনকে আইনজীবী সহকারী সমিতি (মোহরার) থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। একই সাথে এই তিনজনকে আদালত চত্ত্বরে দেখলেই পুলিশের হাতে তুলে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া টাউট ইদ্রিসের আইনজীবী সহকারী সনদ বাতিল ও শিক্ষানবীশ আইনজীবীর পরিচয়পত্র জব্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির অপর একটি সূত্র জানায়, ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি আদালত চত্ত্বরের প্রতারক চক্রের প্রধান হোতা। এরমধ্যে তার এক সদস্য পুলিশের হাতে আটক হয়। গত কয়েকমাসের ব্যাবধানে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সমিতিতে এসেছে। তাকে একাধিকবার শোকজ করা হলেও তিনি প্রতিবারই মনগড়া জবাব দিয়েছেন।
এছাড়া আইনজীবী সহকারী নাজমুল হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শার্শা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। পরে তিনি আইনজীবী সহকারী সুজলপুরের রফিক (মোহরার) ছেলে বিপুলের দারস্থ্য হন। দায়ের করা মামলায় আদালত ৫০ হাজার টাকা ডিক্রি প্রদান করেন। আসামি আদালতে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা বিপুলকে দেয়। কিন্তু বিপুল আদালতে টাকা জমা না দিয়ে হজম করেন। এ বিষয়ে আসাদুর সমিতিতে অভিযোগ করেন। সমিতি বিপুলকে শোকজ করে। কিন্তু তিনি সদুত্তোর দিতে না পারায় তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। এছাড়া নজরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা জেলার এক আসামিকে চিঠি পাঠিয়ে জামিন করিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। এক পর্যায় নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকাও হাতিয়ে নেন। এ বিষয় নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দেন সিনিয়র আইনজীবী তাজমিলুর রহমান স্বপন। পরে তাকে শোকজ করা হলে মনগড়া জবাব দেয় নজরুল।
উল্লেখ্য, কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর ছত্রছায়ায় থেকে একটি চক্রটি নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। ঘার ভাংছেন মক্কেলদের। তাদের সুপারিশে অপরাধীরা একের পর এক অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি আমলে নেন জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটি। এরপর কমিটির সভায় এজেন্ডা করে এই তিনজনের বিরুদ্ধে তারা অ্যাকশানে নামেন।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, আদালত চত্ত্বরে টাউটদের কোনো স্থান নেই। পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। আশ্রয় প্রশয়দাতাসহ কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
খুলনা গেজেট/কেএম