লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে সাত বছরের শিশু নুসরাতকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার রায় মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ঘোষণা করেছেন লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিরাজদ্দৌলাহ কুতুবী। গত ২২ সেপ্টেম্বর আলোচিত এই হত্যা মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে সকাল ১১টায় আলোচিত এ হত্যাকান্ডে শাহ আলম রুবেল নামের একজনকে ফাঁসি ও অপর আসামী বোরহান উদ্দিনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপিত হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের সৌদি প্রবাসী এরশাদ মিয়ার মেয়ে নুসরাত (৭)কে ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ শুক্রবার দুপুরে আইসক্রিম খাওয়ানো ও টিভি দেখার কথা বলে শাহ আলম ওরফে রুবেল (৩০) তাঁর বাসায় নিয়ে যান। এসময় শাহ আলম রুবেলের ঘরে সে ছাড়া অন্য কেউ না থাকায় নুসরাতকে ধর্ষণ করেন শাহ আলম। একপর্যায়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার তিন দিন পর ২৬ মার্চ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পাশ্ববর্তি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া ঠাকুর বাড়ীর ব্রীজের নিচ থেকে নুসরাতের বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, নুসরাতকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার পর শিশু নুসরাতের মা রেহানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই সময় নুসরাতের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, ঢাকা প্রেসক্লাব, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন করেন দেশের সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিশু নুশরাতের মা রেহানা বেগম জানান, তৎকালীন রামগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তোতা মিয়া লাশের সাথে উদ্ধার হওয়া ব্যাগটির পোষ্টার ছেপে পুরো উপজেলাব্যপি ছড়িয়ে দেন। মসজিদে মসজিদে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সহযোগীতা চান ওসি।
লাশ উদ্ধারের এক সপ্তাহ পর নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানার সহযোগীতায় শিশু নুশরাতের লাশের ব্যাগ বহনকারী সিএনজি অটোরিক্সা চালক মোঃ রাকিব হোসেনের তথ্যমতে আটক করা হয় হত্যা ও ধর্ষণকারী শাহ আলম রুবেলের বন্ধু নোয়াগাঁও বাজারের ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী মোঃ বোরহান উদ্দিন (২৫)কে।
বোরহান উদ্দিনকে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদে বের হয় মূল ঘটনা। মোবাইল ট্যাকিংয়ের সূত্র ধরে পুলিশ বেশ কিছু এলাকায় হানা দিলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি ধর্ষণ ও হত্যাকারী একই বাড়ীর চাচা সর্ম্পকৃত শাহ আলম রুবেলকে।
১ এপ্রিল রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগীতায় রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক হয় হত্যা ও ধর্ষণকারী শাহ আলম রুবেল। পরে শাহ আলম রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় কিভাবে শিশু নুশরাতকে হত্যা করা হয়েছে।
আটককৃত শাহ আলম রুবেল জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে বাড়ীর সবাই গোসল করতে গেলে আইসক্রিম খাওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশু নুশরাতকে তার ঘরে ডেকে নেয় শাহ আলম। পরে গলা টিপে ধরে শিশু নুসরাতকে জোরপুর্বক ধর্ষণ করা অবস্থায় শ্বাসরোধ হয়ে সে মারা যায়। লাশ লুকানোর জন্য পাটি দিয়ে মুড়িয়ে স্টীলের আলমিরার উপর রেখে দেয়। রাতে হাত পা মুড়িয়ে নুশরাতের লাশ ব্যাগে ভরে ঐদিন রাতেই ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী বন্ধু বোরহানের সহযোগীতায় ডেকে আনা হয় সিএনজি চালক রাকিবকে। লাশ ভর্তি ব্যাগটি সিএনজিতে তুলে বাড়ী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে ব্রহ্মপাড়া ঠাকুর বাড়ীর খালে ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে ২৮মার্চ বুধবার সকালে নোয়াগাঁও বাজারে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হলে ধর্ষণ ও হত্যাকারী শাহ আলম রুবেল নিজে সে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয়।
রায়ের বিষয়ে শিশু নুশরাতের বাবা এরশাদ মিয়া সৌদি আরব থেকে বলেন, ‘আমি মামলার রায়ে খুশি। এখন আমাদের দাবী দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করা।’
খুলনা গেজেট/ এস আই