খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

আদালতে মুসলিমাকে হত্যার যে বয়ান দিল দুই আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুলতলার জুট মিল শ্রমিক মুসলিমাকে ধর্ষণের পরে খুন করে মৃত দেহকেও দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করে আসামি রিয়াজ ও সোহেল। তারপর মৃতদেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে লাশ বিবস্ত্র করে ফেলে দেয় ধান ক্ষেতে। আর বিচ্ছিন্ন মস্তক লাশের পোশাকের সাথে পুতে রাখে বালুতে। এমনই লোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা দিয়েছে  আসামিরা।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) ফুলতলা উপজেলার আলোচিত মুসলিমা হত্যাকান্ডে নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামি রিয়াজ ও সোহেল। তাদের দু’জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২ এর বিচারক নয়ন বিশ্বাস। জবানবন্দি শেষে তাদের দু’জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ইমদাদের মেয়ে মুসলিমা। গত ১৫ বছর যাবত ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামে তাদের বসবাস। আইয়ান জুট মিলের শ্রমিক ছিল সে। হত্যাকান্ডের চারদিন আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আইয়ান জুট মিলের গাড়িতে মিলের সামনে নামে। সে সময় আসামি রিয়াজ চায়ের দোকানে বসে ধূমপান করছিল। মুসলিমাকে দেখে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে রিয়াজের। মুসলিমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করার জন্য হন্যে হয়ে পড়ে রিয়াজ। এক সময় যোগাযোগ নম্বরও পেয়ে যায়। এরপর একের পর এক ফোন দিতে থাকে মুসলিমাকে। কথা হয় মুসলিমার সাথে। কয়েকদিনের ফোনালাপে রিয়াজের প্রেমের ফাঁদে পা দেয় মুসলিমা।

রিয়াজ ও তার বন্ধু সোহেল দু’জনে মিলে পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলে নিজেদের বাসনা চরিতার্থ করা যায়। ঘটনার রাতে রিয়াজের নাম্বার থেকে সোহেল মুসলিমার নাম্বারে ফোন দেয়। মুসলিমাকে বলা হয় তার সাথে দেখা করতে চায় রিয়াজ। কিন্তু রাতে দেখা করতে চায় না মুসলিমা, সে জানায় ‘তার মা খুব অসুস্থ তাই আসতে পারবে না’। পরে সোহেল মুসলিমাকে বলে ‘দেখা না করলে আত্মহত্যা করবে রিয়াজ।’ পরে একপর্যায়ে রাতেই দেখা করতে রাজি হয় মুসলিমা।

সেদিন রাতে যা ঘটেছিল

রিয়াজের সাথে দেখা করতে ঘর থেকে বাইরে আসলে মুসলিমাকে নিয়ে প্রথমে বেজেরডাঙ্গা বাজারে যায় রিয়াজ ও সোহেল। সেখানে রিয়াজ তাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়। পরে তারা তিনজন মিলে বাজারের বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ায়। এরমধ্যে রিয়াজ তার দু:সম্পর্কের দুলাভাই ইউসুফকে ফোন দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি ঘর প্রস্তুত করতে বলে। ইউসুফ আবার ফোন করে যুগ্নিপাশা গ্রামের মুনসুরকে ঘরের জন্য জানায়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তারা তিনজন মিলে মুনসুরের একটি কক্ষে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরে সোহেলকে ঘর থেকে বের হতে বলে রিয়াজ এর পর মুসলিমাকে ধর্ষণ করে সে। আধাঘন্টা পরে সোহেল ওই ঘরে ধর্ষণের জন্য গেলে চিৎকার করে মুসলিমা। পরে ঘর থেকে বের হয়ে আসে সোহেল।

হত্যা করা হয় যেভাবে

এ ঘটনার পরে নিজেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে রিয়াজকে অনুরোধ করে মুসলিমা। ঘর থেকে বাইরে এসে সোহেল আর রিয়াজ পরামর্শ করে যে, ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হলে তাদের সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। তাই দুই বন্ধু মুসলিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

রাত দেড়টার দিকে মুনসুরের বাড়ি থেকে বের হয় তিনজন। নির্জন রাস্তায় এসে মুসলিমার মুখ চেপে ধরে সোহেল। গায়ের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় রিয়াজ। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দু’পাশ থেকে ওড়না টেনে রাখে দু’জন। মৃত্যুর পরও দু’জনে তাকে ধর্ষণ করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গায়ের ওড়না দিয়ে একটি গাছে  ১০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখে মুসলিমার নিথর দেহ। এরপর লাশটি নামানো হয়। মুসলিমার লাশ যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য রিয়াজ তার বাড়ি থেকে ধারালো বটি এনে দেহ থেকে কেটে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে মৃত দেহের কাপড় খুলে নেয়। মস্তক বিহীন দেহটি উত্তরডিহির রেজাউল মোল্লার ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। বিচ্ছিন্ন মস্তক মৃত দেহ থেকে খুলে নেওয়া কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ওই এলাকার নজরুলের নির্মাণাধীন বাড়ির বালুর নিচে পুতে রাখে রিয়াজ ও সোহেল।

যেভাবে গ্রেপ্তার হয় রিয়াজ

লাশ উদ্ধারের সময় রিয়াজ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল, লক্ষ রাখছিলো পুলিশের গতিবিধির ওপর। তখন এ বিষয়টি পুলিশ আচ করতে পারেনি। রিয়াজের সাথে ভিকটিম মুসলিমার সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। এরপর আসামি রিয়াজ সন্দেহে ওই এলাকার রিয়াজ নামের কয়েকজন যুবককে আটক করে থানা পুলিশ। কিন্তু আটক করা যুবকদের মোবাইল নম্বরের সাথে মুসলিমার নাম্বারে কল দেওয়া নম্বরের মিল পায়না তারা। পরে মুসলিমার ফোন নম্বরের ইতিবৃত্ত বের করে প্রকৃত রিয়াজকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। কিন্তু এর আগে ফুলতলা থেকে পালিয়ে যায় আসামি রিয়াজ। সে পালিয়ে তার বড় ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। ২৯ জানুয়ারি সকালে পুলিশ এ হত্যাকন্ডের অভিযোগে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। আর শুক্রবার রাতে র‌্যাব রিয়াজের মোবাইল ট্রাকিং করে ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তফা জানান, এ মামলায় দুই আসামির অপকর্মের সহযোগী হিসেবে ইউসুফ ও মুনসুরকে আটক করা হয়েছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এএ/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!