কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আবার হবে তো দেখা, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, যদি কাগজে লেখো নাম, শাওন রাতে যদি, সে আমার ছোট বোন- এসব গান আজো আচ্ছন্ন করে যাচ্ছে মানুষের মন।
এসব গানে যার কণ্ঠ আমাদের মোহিত করছে, তিনি মান্না দে। এই অমর কণ্ঠশিল্পীর ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯১৯ সালের ১ মে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
মান্না দে’র আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। ডাক নাম মানা থেকে তিনি মান্না হয়ে ওঠেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সেরা সংগীত শিল্পী এবং সুরকারদের অন্যতম একজন তিনি। বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটিসহ প্রায় ২৪টি ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও বেশি সময় সংগীত চর্চা করেছিলেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাকেই ভারতীয় গানের ভুবনে সর্বকালের অন্যতম সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ সংগীত বোদ্ধা। তার স্মরণে উত্তর কলকাতায় তার বাসস্থানের কাছে মর্মর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
মান্না দে গায়ক হিসেবে আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমারের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সংগীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন। সংগীত ভুবনে তার এই অসামান্য অবদানে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণ প্রদান করে।
মান্না দে’র গান শেখা শুরু তার কাকা বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে’র কাছে। কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন অন্ধ এবং ভ্রাতুষ্পুত্র মান্না দে ছিলেন একাধারে তার শিষ্য ও সহকারী। ‘কতদূরে আর নিয়ে যাবে বলো’ গানটি তার রেকর্ড করা প্রথম বাংলা গান। উস্তাদ দবির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে, যখন সিনেমায় প্লেব্যাক গাইছেন, তখনও উস্তাদ আমান আলি খান ও উস্তাদ রহমান খানের কাছে গান শিখেছেন।
২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি বেঙ্গালুরুতে মারা যান।
খুলনা গেজেট/এনএম