খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯০
  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

 নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। লাখো মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে মহান নেতা শেখ মুজিব বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধুর এই বলিষ্ঠ ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এর আগে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি নিজেদের মত করে পালন করে এলেও ২০২১ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। সরকার ক-শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য এজন্য এক রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আসে।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ই মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক এই ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত আর ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে এবং বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার অনির্বাণ শিখা হয়ে অফুরন্ত শক্তি ও সাহস যুগিয়ে আসছে। এ ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় করিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও এ ভাষণটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালে জ্যাকব এফ ফাইল্ড (Jacob F. Field) প্রকাশিত ২৫০০ বছরের বিশ্বসেরা যুদ্ধকালীন ভাষণের সংকলন উই শ্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস; দ্যা স্পিচ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিস্টোরি (We shall Fight on the Beaches: The Speeches That Inspired History)-এ এই ভাষণ অন্যতম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

দিনটি উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৭টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, দলীয় কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান অত:পর র‌্যালী সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ড অফিস, ইউনিট অফিস এবং মোড়ে মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষন ও দেশাত্ববোধক গান প্রচার (আজান ও নামাজের সময় বাদে) এবং সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হবে। অনুরূপ কর্মসূচি খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে।

খুলনা জেলা প্রশাসন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতি বিজড়িত ৭ই মার্চ দিবস-২০২৩ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

৭ মার্চ সকাল আটটায় শহিদ হাদিস পার্ক থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়ে খুলনা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭ই মার্চে প্রদত্ত ভাষণ প্রচার করা হবে। জাতীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করবে। ৬ ও ৭ মার্চ সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা ও ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সম্বলিত তোরণ স্থাপন করা হবে।

৭ মার্চ সকাল ১০টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ৬ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টায় শিশু একাডেমির খুলনা জেলা কার্যালয়ে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সাজে-সজ্জিত হয়ে ১৯২০ জন ক্ষুদে বক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ পরিবেশন করবে।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিটি কর্পোরেশন, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসমূহ দিবসটি উদযাপন করবে।

 খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৯টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৯টা ১০ মিনিটে র‌্যালি সহকারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কালজয়ী মুজিব এ পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বালন।

খুলনা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে  মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ক্লাব চত্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) এর উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতির পিতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় ইউনিয়ন কার্যালয়ে আলোচনা সভার  আয়োজন করেছে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!