যশোরের চৌগাছায় প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে আগাছা নাশক খেয়ে আত্মহত্যা চেষ্টার তিনদিনের মাথায় প্রেমিকা মিম (১৪) খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে মারা গেছে। আর মুমূর্ষ অবস্থায় একই হাসপতালে চিকিৎসা নিয়ে গুরুতর অবস্থায় বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রেমিক টগর (১৫)।
তারা দু’জনই উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জগদীশপুর-মির্জাপুর ইসমাইল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মৃত জান্নাতুল ফেরসৌস মিম জগদীশপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে এবং টগর একই গ্রামের আক্তার আলীর ছেলে।
বুধবার (৮জুন) সকালে আগাছা নাশক খাওয়ার পর শুক্রবার (১০জুন) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মিম। একই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে টগর।
পুলিশ ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী প্রেমিক-প্রেমিকার পরিবার সূত্রে জানা যায়, উভয়ের পরিবার প্রেমের সম্পর্ক না মেনে নেওয়ায় একসাথে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রেমিক টগর (১৫) ও প্রেমিকা জন্নাতুল ফেরদৌস মিম (১৪)। জোগাড় করে আগাছানাশক। এরপর বুধবার (৮জুন) সকাল ১০ টায় স্কুলে চলাকালীন পরীক্ষা না দিয়ে আগাছা নাশক নিয়ে স্কুলের মূল ভবনের পিছনে যায় দু’জন। সেখানে প্রেমিকার হাতে আগাছানাশক তুলে দেয় প্রেমিক টগর। প্রেমিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মিম ওই আগাছানশক খেয়ে দেয় প্রেমিক টগরের হাতে। প্রেমিকও খায় আগাছানাশক। এরপর দু’জনে যায় পরীক্ষার হলে। প্রায় আধাঘন্টা পরীক্ষার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রেমিকা মিম। শিক্ষকরা বিষয়টি জানতে চাইলে স্বীকার করে সে এবং টগর আগাছা নাশক খেয়েছে। তবে টগর সে সময় অস্বীকার করে শিক্ষকদের বলে সে বিষ খায়নি, শুধুমাত্র মিম খেয়েছে। এরপর সম্পূর্ণ পরীক্ষা দেয় টগর। তখন সবাই ভেবেছিল টগর আগাছা নাশক খাইনি।
তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মিমকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
সেখানে মিমে’র মা সাংবাদিকদের জানান, ‘তাঁর মেয়েকে বিষ খাইয়ে দিয়ে প্রেমিক টগর পালিয়ে যায়।’ ‘তখন তিনি প্রেমিক টগরের আগাছানাশক খাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’ যশোরে মিমে’র অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১০জুন) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মিমে’র মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে পরীক্ষা শেষে বাড়িতে যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে টগরের পরিবার তাকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তাকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখান থেকে টগরকেও বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ছেলেটিকে শুক্রবার ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় সে জগদীশপুর গ্রামের বাড়িতে চিকিৎিসাধীন রয়েছে।
স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, জগদীশপুর-মির্জাপুর ইসমাইল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জগদীশপুর গ্রামের টগর (১৫) এবং একই গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস মিম (১৪)। দু’জনে একই শ্রেণিতে লেখা-পড়ার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। এক পযার্য়ে মিমে’র বাবা বিষয়টি জানতে পেরে মেয়েকে শাসন করেন। এমনকি মারপিটও করেন। বাবার মারপিটে অভিমান করে আগেও একবার মিম আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে মিম সুস্থ হয়।
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, অপরিণত বয়সের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে উভয়েই একসাথে আগাছানাশক খায় তারা। আগাছা নাশক খেয়ে প্রায় ত্রিশ মিনিট পরীক্ষা দেয় মিম আর টগর সম্পূর্ণ পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষার হলে মিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয় শিক্ষকরা। আর বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যরা হাসপতালে নেয় টগরকে। উভয়কে যশোরে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উভয়কে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শুক্রবার দুপুরে মিম মারা যায়। আর টগর গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তিনি আরও বলেন এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেননি।