প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার আজ ১৪ তম বর্ষপূর্তি। দাকোপে আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ দু’টি ইউনিয়নের ৬৮৫টি পরিবার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অভ্যান্তরীন সড়ক যোগাযোগে বেহাল অবস্থা, খাবার পানির তীব্র সংকট আর কর্মসংস্থানের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ মানুষ রয়েছে এলাকা ছাড়া।
২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় খুলনার উপকুলিয় উপজেলা দাকোপের দু’টি ইউনিয়ন। বেড়ীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ মানুষ। গৃহহারা মানুষের ঠাঁই হয় বেড়িবাঁধে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে নানামূখী উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে নির্মিত হয় বাঁধ। দীর্ঘ ২১ মাস পর পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি ঘরে ফিরে যায় তারা। তবে নদী ভাঙনে ভিটে হারা ভূমিহীন অনেক পরিবার ঘরে ফিরতে পারেনি। তখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তাই ছিল তাদের বেঁচে থাকার ভরসা। গত ১৪ বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরণের সহায়তা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণ এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ওই এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস্য নদী থেকে চিংড়ি পোনা ও বনজ সম্পদ আহরণ। বর্তমানে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। আর বনজ সম্পদ আহরণ অনেকাংশে কমে এসেছে। কর্মহীন মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন শহরে শ্রম বিক্রি করছে।
কালাবগি এলাকার আজিজ মল্লিক, দীপক মন্ডল জানান, আইলায় ভিটে বাড়ী বিলিন হওয়ার পর তাদের আর কোন জায়গা জমি না থাকায় এখনো ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছেন। সরকার পূনর বাসন না দিলে আর কোন দিন তাদের ঘরে ফেরা হবে না বলে জানান।
সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫০০ পরিবারের জায়গা জমি না থাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। তারা বেড়ীবাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মসংস্থান না থাকায় তারা এলাকার বাহিরে গিয়েও কাজকর্ম করে জিবিকা নির্বাহ করছে। তা ছাড়া জীবন ধারনে খাওয়ার পানিরও রয়েছে তীব্র সংকট। অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুরের অনিরাপদ পানি পান করে থাকে। অভ্যান্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত নাজুক। মান সম্মত জীবন ব্যবস্থার কিছুই নেই আইলা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায়। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় সেই বাঁধ ও হুমকির মুখে পড়েছে।
কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল জানান, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৮৫ পরিবার এখনো পুরানো ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের উপর বাস করছে। সরকারী খাস জায়গায় তাদের পূনর বাসনের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, আইলা পরবর্তী যে সব লোক ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের উপর বাস করতো তাদেরকে পর্যায়েক্রমে সরকারিভাবে মুজিববর্ষের ঘরসহ আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর যারা বাকি আছে তাদেরও দেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি