ইয়াস আতঙ্কে নয়, বেড়িবাঁধ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছিলো খুলনার উপকূলীয় কয়রাবাসীর। প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় আইলার এক যুগ পুর্তিতে আজও ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি মহারাজপুরবাসী। আইলার একযুগেও নজর কাড়েনি পবনার রিংবাধসহ ইউনিয়নের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ।
বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে মেঘলা আকাশ, নদীতে জোয়ারের সাথে শুরু হয় থেকে থেকে দমকা হাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তার মাঝে রৌদ্রের ঝলকানি। বৃদ্ধি পেতে থাকে নদীতে জোয়ারের পানি। এলাকাবাসী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবুও শেষ রক্ষা হয়নি সিডর, আইলা ও আম্পান দুর্গত মানুষের। বিধস্ত হয়েছে ঘর বাড়ি, রাস্তাঘাটসহ মৎস্য ঘের।
কয়রা নদী ও কপোতাক্ষ নদীতে জোয়ারের পানি ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসে মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনার বেড়িবাঁধ, মঠেরকণার ও দশালিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন চৌকুনি, তেতুলতলার চর ও শেকেরকনা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে৷ এছাড়া শাকবেড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে গাতিরঘেরী, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে আংটিহারা, বিনাপানি, পদ্মপুকুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে বুধবার দুপুরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছিলো প্রায় ৩৫ টি গ্রাম দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার ৪শ’ জন। এছাড়া ওই এলাকার ৫ হাজার ৮৫০ পরিবারে মধ্যে ১২০০ পরিবার আংশিক বিধ্বস্ত ও ৫০ পরিবার সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্গত এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২শ’ মানুষ। তবে রাতের জোয়ারে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ার আরো গ্রাম প্লাবিত হতে পারে এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছে।
মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করা হয়েছে। তবে সুবলের মোড় থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত যে বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে সেটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজ করা সম্ভব নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিপিএম এর মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব ছিলো। তাছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ জলোচ্ছ্বাসে কারোর হাত নাই।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর যেখানে বাঁধ ভেঙ্গে যায় সেখানে বাঁধ মেরামতের কাজ হয়। আর ৬০ দশকের ১১৬ কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ তবে পানি উন্নয়ন কেন কাজ করে না সেটা অজানা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল বাঁধ মেরামত করা।
উল্লে খ্য, ২০০৯ সালে আম্পানে পবনার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন। বিধ্বস্ত হয়েছিলো ঘর-বাড়ি ফসলি জমিসহ মৎস্য ঘের। দীর্ঘ ৩ বছর পর রিংবাধ নির্মাণ করা সম্ভব হলেও। তার উপর পরেনি এক চাপ মাটি।
খুলনা গেজেট/এনএম