যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের আল-মামুন আকুঞ্জি হত্যা মামলার প্রধান আসামি চরমপন্থি রিপন ফকিরকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফেংয়ে হত্যার নেপথ্যের ঘটনা জানান যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
এরপরে আটক রিপন ফকিরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যা মামলার সাক্ষী মাসুম আকুঞ্জিও আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
পুলিশ সুপার সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শুভরাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর ফকিরের ছেলে রিপন ফকির নিউ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। নিহত আল-মামুন আকুঞ্জি ও তার ভাই আরমান আকুঞ্জিও একসময় তার সাথে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরে দু’জনে আলাদা হয়ে যান। অপরদিকে রিপন ফকির নিহত আল-মামুনের চাচী বেবি বেগমের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি বেবি বেগমকে বিয়ে করেন। পরে তাকে ভারতে নিয়ে দু’জনে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। এরপর আবার রিপন ফকির ভারত থেকে দেশে চলে আসেন। তবে মায়ের সাথে রিপন ফকিরের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি বেবি বেগমের ছেলে মাসুম আকুঞ্জি। বিষয়টি জানতে পেরে রিপন ফকির এক সময় দলবল নিয়ে খুলনার ফুলতলা থেকে একবার মাসুম আকুঞ্জিকে অপহরণ করতে গিয়েছিলেন। তবে সেই মিশন সফল হয়নি।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, রিপন ফকিরের সাথে বিরোধের বিষয়টি এক পর্যায়ে চাচাতো ভাই আল-মামুন আকুঞ্জিকে জানান মাসুম আকুঞ্জি। এসময় আল-মামুন আকুঞ্জি বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার কথা জানান। কিন্তু এরইমধ্যে মাহাবুব নামে এক সহযোগী রিপন ফকিরের কাছে গিয়ে উল্টো জানান, মাসুম ও আল-মামুন আকুঞ্জি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। বিষয়টি সত্য ভেবে গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে শুভরাড়া গ্রামের সোহান মোল্যার বাড়ির সামনে মাসুম আকুঞ্জি ও আল-মামুন আকুঞ্জির ওপর দলবল নিয়ে চড়াও হন রিপন ফকির। এসময় আল-মামুন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে চান। তার কথা বিশ্বাস না করে মাসুম আকুঞ্জিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান রিপন ফকির। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলিবিদ্ধ হন আল-মামুন আকুঞ্জি। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আল-মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ডিবি পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ এলাকার একটি বাড়ি থেকে অভিযুক্ত চরমপন্থি রিপন ফকিরকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে শুভরাড়া থেকে দুটি পাইপগান, ২ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, ৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও ৪টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, আটক রিপন ফকিরকে এদিনই আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দিতে রিপন ফকির আদালতে বলেছেন, তিনি মাসুম আকুঞ্জির মা বেবি বেগমকে বিয়ে করেন। এ জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাসুম আকুঞ্জি। তাকে ধরিয়ে দিতে তার ফুফাতো ভাই মাহাবুবকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন মাসুম আকুঞ্জি। তবে মাহাবুব ঘটনাটি তার কাছে ফাঁস করে দেন। এ ঘটনার পর তিনি ও তার সহযোগী বিল্লালসহ কয়েকজন পানের বরজের ভেতরে মাটিতে পুঁতে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র তুলে ঘটনার দিন মাসুম আকুঞ্জিকে খুঁজতে যান। পথে মাসুম আকুঞ্জি ও আল-মামুন আকুঞ্জির সাথে তাদের দেখা হয়ে যায়। তার কাছে অস্ত্র দেখতে পেয়ে মাসুম আকুঞ্জি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গুলি করার ক্ষমতা নেই তোমার। এ কথা শুনে তিনি আল-মামুন আকুঞ্জির বুকে গুলি করেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান।
পুলিশ জানায়, অস্ত্র-গুলি ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় আটক রিপন ফকিরের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অস্ত্র আইনের এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তার ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন