Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে হিংসার আগুন

গৌরাঙ্গ নন্দী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পাঁচ বছরের জন্যে আবার সরকার গঠনের জন্যে আট দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। বলাইবাহুল্য, বেশ দীর্ঘমেয়াদে ভোট। দিল্লী হতে অধিপতিরা ছুটে আসছেন প্রচারে। মহামান্যদের প্রচারের সুবিধায়, না-কি, দীর্ঘ সময় ধরে সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে হিন্দুত্ববাদীদের জয় নিশ্চিত করার জন্যে এমনতরো ভোটগ্রহণ পর্ব, তা বলা মুশকিল। যাহোক ফলাফলের জন্যে আগামী ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর এই সময় এবং তারপরেও এই নির্বাচনের ফলাফলের একটি প্রভাব একেবারে নিকট-প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের দেশের উপর পড়তে থাকবে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে আমাদের উৎসাহও আছে। থাকা স্বাভাবিক। এবারের নির্বাচনে প্রধান দুটো প্রতিপক্ষ – এক, তৃণমুল কংগ্রেস, তারা ক্ষমতায় আছে; আবারও আসতে চায়। আর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি, যারা দিল্লী শাসন করছে; তারা বাংলা দখল করতে চায়। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-এর সংযুক্ত মোর্চা। নির্বাচনী মাঠ গরম করছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ছাড়াও তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং মমতা ব্যানার্জী। মাঠে থাকলেও গণমাধ্যমে সংযুক্ত মোর্চার উপস্থিতি কম।

ভোটের ফলাফল কি হতে পারে??

বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে এই তৃণমুল এবং বিজেপি একসাথে কাজ করেছিল, তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল উগ্র বামপন্থী বা মাওবাদীদের একাংশ। কি হিসাব ছিল তাদের, তা বলা মুশকিল! তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, বিজেপি তার পায়ের তলায় মাটি খোঁজার আশায় সঙ্গী হিসেবে মমতার ঘাড়ে ভর করেছিল। মমতাও তখন ক্ষমতার আশায় তাদের সঙ্গী করেছিল; আর এখন সময় বুঝেই বিজেপি তার আসল চেহারা বের করেছে, মমতাকে একেবারে উচ্ছেদ করার জন্যে কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বামফ্রন্ট উচ্ছেদ কাণ্ডে তৃণমূল নন্দীগ্রামে মানুষ খুনের ঘটনাও ঘটিয়েছিল (নিজেদের কোন্দলে যা সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে), সংখ্যালঘুদের বঞ্চনা তুলে ধরেছিল, সংখ্যালঘু মুসলিমরা তাকে সমর্থন করেছিল, অনেকেই গত দশ বছরে ক্ষমতার ভাগও পেয়েছে। মমতা সংখ্যালঘুদের জন্যে নানান প্রণোদনামূলক কর্মসূচীও নিয়েছিল। তবে এবারের নির্বাচনে মমতা মুসলিম শব্দটি একেবারেই ব্যবহার করছে না; কারণ বিজেপি বলছে, মমতা মুসলিম তোষণকারী। এতে তিনি ভয়ও পেয়েছেন, কারণ জিততে হলে তার হিন্দু ভোট প্রয়োজন। এটি ঠিক, হিন্দুত্ব বর্ণবাদী বিজেপিকে মুসলিমরা ভোট দেবে না; সেক্ষেত্রে সংযুক্ত মোর্চা মুসলিমদের কিছু ভোট পেতে পারে। সংযুক্ত মোর্চা মুসলিম ভোট যতো পাবে, তৃণমূলের ভোট ততো কমবে; সেক্ষেত্রে মোর্চার প্রার্থী জিততে না পারলে লাভ হবে বিজেপি’র। আবার স্থানীয়ভাবে ভোটের রাজনীতিতে প্রার্থী একটি বিবেচ্য বিষয়। গত দুটো (বিধান সভা ও লোকসভা) নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তৃণমূলের একার ভোট পঞ্চাশ শতাংশের মতো। সেক্ষেত্রে তাদের দশ শতাংশ ভোট কমলেও, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও, তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জেতার সম্ভাবনা থাকছে! সংযুক্ত মোর্চার ভোট বাড়বে; তবে ভোটের তুলনায় আসন বাড়বে বলে মনে হয় না। সবমিলিয়ে একটি ত্রিশঙ্কু ফলাফল দেখা যেতে পারে।

ফলাফল যাই হোক না কেন, ব্রিটিশপূর্বকালে যে কলকাতা গোটা ভারতের উপর সাংস্কৃতিক-রাজনীতিক প্রভূত্ব করার স্বপ্ন দেখেছিল, এবং তাদেরকে হঠাতে সেই সময়ে উত্তর-ভারতীয় রাজনীতিকরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গী করে কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালি-বাবু রাজনীতিকদের বর্জন-বয়কটের যে ধারা শুরু করেছিল, বিজেপি তার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি দিয়ে এতোকালে তা সফল হতে চলেছে। এখন নির্বাচনী এজেন্ডায় মানুষের রুটি-রুজি-কাজের অধিকার ঠাঁই পায় না; কুরুচিপূর্ণ বিতর্ক এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো ও তার প্রয়োগটাই প্রাধান্য পায়। মানুষের মধ্যে হিংসা জাগিয়ে তোলা, অন্ধত্বকে বলিয়ান করাই এখন প্রধানতম ধারা; অবশ্য, কলকাতাকেন্দ্রিক গণমাধ্যমে এই অন্ধত্ব প্রচার-প্রসার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যে ঘৃণা-হিংসা বাড়ছে, তার আঁচে-তাপে আমাদেরও দগ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই !!!

(ফেসবুক ওয়াল থে‌কে)

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন