ব্যস্ত জীবনে অনেকেই রাতে কম ঘুমিয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে আবার কেউ ফোন স্কোলিং করেন। আর এমন করতে গিয়ে ঘুমের সময় কমে যায় অজান্তেই। কিন্তু এই অভ্যাস ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে তৈরি করছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
চিকিৎসকদের মতে, ঘুম কেবল বিশ্রামের বিষয় নয়, এটি শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতার অন্যতম প্রধান উপাদান। সম্প্রতি নিউরোলজিস্ট ডা. রিতু ঝা, এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. প্রভীন কুলকার্নি জানিয়েছেন ঘুমের অভাব কীভাবে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে ব্যাখ্যা করেছেন।
মস্তিষ্কের ক্ষতি: স্মৃতিভ্রংশ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি
নিউরোলজিস্ট ডা. রিতু ঝা জানান, গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সক্রিয় হয় গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম, যা মস্তিষ্কের ‘বর্জ্য পরিস্কার’ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। এই সময় মস্তিষ্ক ক্ষতিকর প্রোটিন, যেমন বিটা-অ্যামাইলয়েড, অপসারণ করে। এই প্রোটিনের জমাটবদ্ধতা আলঝেইমার’স রোগের একটি মূল সূচক হিসেবে বিবেচিত। যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন মস্তিষ্ক এই পরিশোধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারে না, ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ডা. ঝা বলেন, যখন মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না, তখন নিউরনগুলো অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে তথ্য সংগঠনে ব্যর্থ হয়। এতে স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানীয় অবনতি দ্রুত ঘটে।
তিনি আরও সতর্ক করেন, এই প্রভাব কেবল বয়স্কদের নয়, ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই বয়সে ঘুমের অভাব থাকলে তা পরবর্তী জীবনে ডিমেনশিয়ার বীজ বপন করতে পারে।
হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব: বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি
ঘুম কেবল মস্তিষ্ক নয়, হৃদ্যন্ত্রেরও বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের সময়। কিন্তু যথেষ্ট ঘুম না হলে শরীর ক্রমাগত চাপের অবস্থায় চলে যায়, যা হৃদযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। কার্ডিওলজিস্ট ডা. প্রভীন কুলকার্নি বলেন, ভালো ঘুম কার্ডিওমেটাবলিক ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি শরীরের হরমোন, হৃদযন্ত্র ও বিপাকক্রিয়ার মধ্যে সূক্ষ্ম সম্পর্ক রক্ষা করে।
তিনি বলেন, নিয়মিত ঘুমের অভাবে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘ্রেলিন হরমোন বা ক্ষুধা হরমোন বেড়ে যায়, আর লেপ্টিন হরমোন কমে যায়, ফলে ওজন বাড়ে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে করটিসল বা স্ট্রেস হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়, যা ইনফ্লেমেশন, উচ্চ রক্তে গ্লুকোজ, ও ধমনিতে প্লাক জমার ঝুঁকি বাড়ায়। এই অবস্থাই ধীরে ধীরে হার্ট অ্যাটাক বা অনিয়মিত হার্টবিটের কারণ হতে পারে। ডা. কুলকার্নি বলেন, নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং হৃদ্যন্ত্রকে চাপমুক্ত রাখে।
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কাজের চাপ যতই থাকুক, রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। ঘুমের ঘাটতি শুধু ক্লান্তিই আনে না এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, হরমোন, ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সারাদিন কাজ শেষে পর্যাপ্ত ঘুমান।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
খুলনা গেজেট/এএজে
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
