বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

কি এই ইয়ার্বা মাতে, যা মেসি নেইমাররা পান করেন!

লাইফ স্টাইল ডেস্ক

মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ থেকে শুরু করে পগবা, গ্রিজম্যান। সবাইকেই ছোট্ট একটি পাত্র থেকে এই পানীয় পান করতে দেখেছেন আপনি। দিন দিন তাবত দুনিয়ার ফুটবলারদের প্রিয় পানীয় হয়ে উঠছে ইয়ার্বা মাতে। কিন্তু কী এই ইয়ার্বা মাতে?

দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশদের আগমনের আগে আদিবাসীদের বহুল ব্যবহৃত পানীয় ছিল এই ইয়ার্বা মাতে।

গুয়ারানি ও টুপি আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা একে ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করত। দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ উপনিবেশ তৈরি হওয়ার পর আস্তে আস্তে তা ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একই সময় চীন থেকে চায়ের আগমন থমকে দেয় ইয়ার্বা মাতের জয়যাত্রা। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে মূলত চায়ের সুলভতা আর সহজ প্রস্তুত প্রণালি।

ইয়ার্বা মাতের সবচেয়ে বড় উৎপাদক হলো ব্রাজিল আর ক্রেতা উরুগুয়ে। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা অনেক। তিন বেলাই সেখানে পানীয় হিসেবে পান করা হয় ইয়ার্বা মাতে। আর বর্তমান সময়ের সেরা তিন তারকা, মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ তো ওই এলাকারই বাসিন্দা। তাঁদের হাত ধরেই আবার ইউরোপে জনপ্রিয় হচ্ছে ইয়ার্বা মাতে।

জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও চা-কফিকে কিন্তু খুব কমই প্রকাশ্যে খেলোয়াড়দের হাতে দেখা যায়, কিন্তু ইয়ার্বা মাতের বেলায় ব্যাপারটা ভিন্ন, খেলোয়াড়দের হাতে সব সময়ই দেখা মেলে তার। এর কারণ, ইয়ার্বার স্বাস্থ্যগুণ। পেশাদার ফিজিশিয়ানদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করা হয় ফুটবলারদের ডায়েট। অনেক হিসাব-নিকাশ করে তবেই একেকটি খাবার তাঁদের ডায়েট চার্টে ঢোকানো হয়। সেখানে হুট করেই একটা পানীয় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, ভাবাটা ভুল। বরং সবকিছু মাথায় রেখেই খেলোয়াড়দের এই পানীয় পানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

একজন খেলোয়াড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, ইয়ার্বা মাতেতে তার সবই আছে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও নিউট্রিশনের ভরপুর ইয়ার্বা মেদ কমাতে কার্যকর। রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে খেলোয়াড়কে রাখে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিমুক্ত। তবে ইয়ার্বা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ম্যাচের ঠিক আগে ও পরে। দ্রুত অবসাদ কাটিয়ে চাঙা করতে এর জুড়ি মেলা ভার। তাই ফুটবলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পানীয়।

যেভাবে তৈরি করবেন ইয়ার্বা মাতে

এই পানীয়র স্বাদ অনেকটা চা ও কফির মিশ্রণের মতো। তবে এই পানীয়র প্রস্তুত প্রণালি অপেক্ষাকৃত জটিল। এ কারণেই পুরো বিশ্বে এখনো চা-কফির মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি ইয়ার্বা মাতে। ইয়ার্বা মাতে পান করার জন্য আছে আলাদা ধরনের পাত্র, যাকে বলে ‘গোর্ড’। লাউয়ের মতো ফল থেকে একসময় তৈরি করা হতো এই গোর্ড। ভেতরটা পরিষ্কার করে তাতে পরিবেশন করা হতো ইয়ার্বা মাতে। আর সেটা পান করতে লাগত বমবিলা স্ট্র। বর্তমানে কাঠের গোর্ড ও সিলভারের বমবিলা বেশ সহজলভ্য।

জেনে নেওয়া যাক পানীয়টির প্রস্তুত প্রণালি

১. প্রথমে ইয়ার্বা পাতা ও এর গুড়া দিয়ে পাত্রের তিন-চতুর্থাংশ পূরণ করতে হবে।

২. ওপরের অংশ ঢেকে পাত্রটিকে ওপরে-নিচে ঝাঁকিয়ে তৈরি করতে হবে মিশ্রণ। এমনভাবে মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে, যাতে প্রতিটি জায়গায় ইয়ার্বা পাতার পাউডার ও পাতা সমপরিমাণে থাকে।

৩. এরপর পাত্রটিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে পাত্রের নিচে প্রথমে ঠান্ডা পানি ও পরে গরম পানি দিতে হবে।

৪. খেয়াল রাখতে হবে, সব পাতা যাতে পানিতে ভিজে না যায়। পানির ওপরে ইয়ার্বাপাতার আবরণ স্বাদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৫. সেই পানিতে বমবিনো স্ট্র বসিয়ে আপনিও উপভোগ করতে পারেন ইয়ার্বা মাতে।

বর্তমানে টি-ব্যাগের মতো ছোট ছোট ব্যাগে ইয়ার্বা মাতে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন কোম্পানি। যা কুসুম গরম পানিতে ছেড়ে দিয়ে ওপরে ইয়ার্বা পাতা ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে। তবে আসল দক্ষিণ আমেরিকান স্বাদ পাবেন কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

 

খুলনা গেজেট/কেএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন