বুধবার । ২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ । ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সাতক্ষীরার চার আসনের দু’টিতে বিএনপি’র প্রার্থী বদলে আন্দোলন, সুবিধাজনক অবস্থানে জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সাতক্ষীরার চারটি আসনে জমজমাট প্রচার চলছে। বড় দু’দল ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দুটি আসনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। পরদিন থেকে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, মটরসাইকেল র‌্যালি ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছে মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপি নেতার কর্মী সমর্থকরা। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে জামায়াত ইসলামীতে, প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াতের কোন্দল না থাকায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে দলটি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় আসন ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াত জয়লাভ করে। অপরটি পায় আওয়ামী লীগ। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ চিত্র পাল্টে যায়। শুধু সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে জামায়াত ছাড়া আর বাকি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সালে জামায়াত আবারও তিনটি আসনে জয়লাভ করে। জেলার মধ্যে সেবারই প্রথম বিএনপি’র টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি আসন কমিয়ে সাতক্ষীরায় চারটি সংসদীয় আসন করা হয়। এ নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপি একটি আসনও পায়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দুটি করে আসনে জয়লাভ করে।

সাতক্ষীরা সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ার সুবাদে এখানকার মুসলিম ভোটারদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ভারত থেকে আসা। যাদের অধিকাংশ জামায়াতের সমর্থক। সে কারণে সাতক্ষীরায় জামায়াতের একটি ভালো প্রভাব রয়েছে। বরাবরের মতো জামায়াত ইসলামী এবারও সাতক্ষীরার চারটি আসনে জিততে চায়।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর-দেবহাটা) আসনে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ ও আশাশুনি) থেকে হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনে সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম।

অপরদিকে সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা-২ আসনে মোঃ আব্দুর রউফ, সাতক্ষীরা-৩ আসনে সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে ড. মনিরুজ্জামান মনির।

সাতক্ষীরা-১ আসনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছাত্রদল ও ডাকসুর সাবেক নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এবারও বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, “তালা-কলারোয়ার এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আমার প্রচেষ্টায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমি নির্বাচিত হলে পাটকেলঘাটাকে উপজেলায় উন্নীত করার পদক্ষেপ নেব। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যবস্থা নেব।”

সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন আলীপুর ইউপির একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছে মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা। মহাসড়কের টায়ার জ¦ালিয়ে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন আব্দুল আলিমের সমর্থকরা। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ৩৩ জন দায়িত্বশীল নেতা বিএনপি মহাসচিবের কাছে আবেদন করেছেন। এ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী তাজকিন আহমেদ চিশতি। তারপক্ষে বিএনপি নেতারাও মহাসচিব বরাবর আবেদন করেছেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ সমাবেশ করে কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উত্তাল রেখেছেন শহিদুল আলমের কর্মী সমর্থকরা। এদিকে মনোনয়নের আশ্বাসে শুক্রবার এলাকায় ফিরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন ডাঃ শহিদুল আলম।

ডাঃ শহিদুল আলম বলেন, “মনোনয়নের আশ্বাস পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছি। দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় সর্বশ্রেণি-পেশার মানুষ আমার সাথে আছেন।”

মনোনয়নের বিষয়ে কাজী আলাউদ্দীন বলেন, “আমি সকল সময়ে জনগণের পাশে ছিলাম। বিভেদ ভুলে দল যাকে মনোনীত করবে, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করার অনুরোধ আলাউদ্দীনের।”
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ লন্ডন প্রবাসী ড. মনিরুজ্জামান মনির। তিনি জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. মনিরুজ্জামান বলেন, “সংসদ নির্বাচনে আমি হয়তো নতুন মুখ। তবে পাঁচ বছর ধরে আমি শ্যামনগরের আপামর জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।”

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন