মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২

কুষ্ঠরোগে ভয় নয়, বাড়ছে সচেতনতা

আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা

“চামড়ায় প্রথম দাগটা উঠেছিল তিন বছর আগে। গায়ে জ্বর, শরীর ব্যথাÑতারপর ধীরে ধীরে হাত-পায়ের অনুভূতি হারিয়ে ফেলি। চিমটি কাটলেও বুঝতে পারতাম না কিছু।” এভাবে বলছিলেন সাতক্ষীরা শহরের মেহেরুন্নেসা (ছদ্মনাম, ৩৮)।

তিনি জানান, ‘প্রথমে কেউই ধরতে পারেনি এটা কী ধরণের রোগ। স্থানীয় ডাক্তার বলেছিলেনÑচর্মরোগ। পরে ভারতের এক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারিÑআমি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত।’

রোগটি ধরতে দেরি হওয়ায় তাঁর শরীরে গুটি গুটি দাগ ওঠে, একপর্যায়ে মাংস পঁচে যায়। তবুও চিকিৎসা নিতে লজ্জা পাননি, কিন্তু সমাজের অবহেলা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেশী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার সঙ্গে খেতে চাইত না। যে পুকুরে গোসল করতেন, সেখানে আর কেউ নামত না।

তবে সময়ের সঙ্গে বদল এসেছে। “এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়লে অঙ্গহানি হয় না” বলেন মেহেরুন্নেসা।

মেহেরুন্নেসার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভার গড়েরকান্দা এলাকার রহিমা খাতুনের (ছদ্মনাম, ৪৫)। তিনি জানান, কুষ্ঠরোগ ধরা পড়তে তাঁরও দেরি হয়। আমার দুই হাতে দশটা আঙুল আর পায়ে তিনটা আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, কেউ কাছে আসত না।

এখন তিনি নিয়মিত ওষুধ খান এবং সরকারি টিবি-লেপ্রসি প্রোগ্রামের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বেসরকারি সংস্থা সিএসএস এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে সাতক্ষীরা ২ জন, বাগেরহাট ৫ জন; ২০২০ সালে সাতক্ষীরা ১২ জন, বাগেরহাট ০ জন; ২০২১ সালে সাতক্ষীরা ২৯জন, বাগেরহাট ৩১জন; ২০২২ সালে সাতক্ষীরা ৫০ জন, বাগেরহাট ৭৬ জন; ২০২৩ সালে সাতক্ষীরা ৪৯ জন, বাগেরহাট ৯২ জন; ২০২৪ সালে সাতক্ষীরা ৬৮ জন বাগেরহাট ১০১ জন এবং ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সাতক্ষীরা ৩৫ ও বাগেরহাটে ৭৪ জন কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বর্তমানে সাতক্ষীরায় চিকিৎসাধীন আছেন ৫১ জনের মধ্যে কালীগঞ্জে ৩৯ জন, আশাশুনিতে ১১ জন এবং সদরে একজন।

সাতক্ষীরার জেলা কুষ্ঠ ও টিবি নজরদারি চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, “আগে মানুষ কুষ্ঠরোগী দেখলেই ভয় পেত, এখন আর তেমনটা নেই। ইমাম, স্থানীয় প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোয় কুসংস্কার অনেকটাই কমেছে।”

তিনি আরও বলেন, “কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় কুষ্ঠ শনাক্তের হার তুলনামূলক বেশি, কারণ সেখানে সিএসএস ও অন্যান্য সংস্থা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। রোগী সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে, কারণ এখন বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হয়, ফলে অঙ্গহানির ঘটনা কমেছে এবং রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন