মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২

মসজিদের জমি প্রভাবশালীদের দখলে!

কালিগঞ্জ প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক ‘প্রবাজপুর শাহী মসজিদ’। এটি মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনুপম নিদর্শন। মসজিদটি দেখা ও নামাজ আদায়ের জন্য দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক এখনও সেখানে ভিড় করেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সুলতানি আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ একটি প্রাচীন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা যা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ১১০৪ হিজরী সনের ১৯ রমজান মোতাবেক ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২মে তৎকালীন ধুলিহর পরগনায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি জ্বীনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে বলে কথিত থাকলেও এটি মূলত: সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে নির্মিত হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ তাঁর সেনাবাহিনীর নামাজের জন্য যমুনা নদীর তীরে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির বহির্বিভাগের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৯ ফুট ৮ ইঞ্চি। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চির বর্গাকৃতির একটি নামাজের জায়গা রয়েছে।

মসজিদের দেয়ালগুলো ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট পুরু। আর মসজিদের প্রধান দরজাটি ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। মসজিদটিতে ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বারান্দা ছিল যা এখন আর নেই।

মসজিদটিতে মোট ১০টি দরজা থাকলেও বর্তমানে দরজার নিচের অংশে পাতলা প্রাচীর নির্মাণ করে জানালার আকৃতি করা হয়েছে। তিনটি অলংকৃত মেহরাবও রয়েছে মসজিদটিতে। চার গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হিসেবে এখনও সবার নজর কাড়ে।

ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে মসজিদটি ১৯৬৮ সালের পূরাকীর্তি আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। প্রায় ৫শ’ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি সম্প্রতি কিছু সংস্কার হলেও তা যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আরও সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা সচেতন মহলের।

স্থানীয় কয়েকজন মুসুল্লী জানান, সুদীর্ঘ ৫শ’ বছর পূর্বে মুঘল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদে স্থানীয় মুসুল্লীবৃন্দ ছাড়াও বহু দুরদুরান্ত থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীবৃন্দ এখানে নিয়মিত ওয়াক্তিয় নামাজ এবং জুমআ’র নামাজ আদায় করেন। প্রাচীন এই মসজিদের অবকাঠামো দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।

সজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি নিজেদের দায়িত্ব নেয়ার ফলে মসজিদের ভগ্নদশার চিত্র দেখতে পেলেও সরকারি বিধি বিধানের কারণে আমরা কোন সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করতে পারি না। নির্মাণকালে মসজিদের নামে নুরুল্লা খাঁ ১৬ একর ৮১ শতক জমি দিয়েছিলেন। মসজিদ নির্মাণের পর থেকে ২৯২ বছর যাবত সম্পূর্ণ জমি মসজিদ কর্তৃপক্ষের দখলে ছিল। তারপর মসজিদের খেদমতকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা মসজিদের নামিয় জমি নিজেরা তঞ্চকতার মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে দখলে নেয়।

বর্তমান জরিপে ৮ একর ৩৯ শতক জমি মসজিদের নামে রেকর্ডভূক্ত হলেও মাত্র ৭২ শতক জায়গায় খননকৃত একটি পুকুর, ৫ শতক জমির উপর নির্মিত মসজিদ, ওজুখানা ও পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মিলে সর্বসাকুল্যে ১ একর ৮ শতক জমি ছাড়া বাকি জমি বেদখলে আছে। জমি উদ্ধারের জন্য হাইকোর্টে আপিল মামলা বিচারাধীন আছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির যথাযথ সংস্কার ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন