তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) কার্যক্রমের ক্ষতিপূরণের বকেয়া ৪৮ কোটি টাকা দ্রুত প্রদানের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা। গতকাল সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে বিল অধিবাসীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ও স্বাক্ষর করেন পাখিমারা বিল কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল আলীম, সহসভাপতি গোলদার আশরাফুল হক, সদস্য শেখ রজব আলী, মোঃ রাশেদ সানা, মোঃ ছফেদ আলী সর্দার, মোঃ রেজাউল করিম গাজী, তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান, সদর উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মোঃ মফিজুর রহমান প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরার তালার কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছয় বছর পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম চালু ছিল। এ সময়ে ১ হাজার ৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা চলার কারণে কৃষিজমিতে কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়নি। সরকারের প্রতিশুতি অনুযায়ী এ সময়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও জমির মালিকেরা মাত্র দুই বছরের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকি চার বছরের বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়ে গেছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার অন্তত ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি এবং প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। নদী তার নাব্যতা ফিরে পেয়েছে, জীববৈচিত্র্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর কৃষি উৎপাদন বন্ধ থাকায় পাখিমারা বিলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। কর্মসংস্থানের অভাব, ঋণগ্রস্ততা, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়া এবং চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা বলেন, বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও বকেয়া ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এর ফলে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে টিআরএম বন্ধ হয়ে গেছে। কপোতাক্ষ নদ আবারও পলিতে ভরাট হয়ে নতুন করে জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে পড়ছে বিশাল এলাকা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অনিশ্চয়তার কারণে স্থানীয়রা নতুন করে টিআরএম বাস্তবায়নেও অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সময়মতো ক্ষতিপূরণ না দিলে কপোতাক্ষ অববাহিকায় জলাবদ্ধতার তীব্রতা আরও বাড়বে এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল আবারও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
খুলনা গেজেট/এনএম