গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বেতের ধামা একসময় ছিল অপরিহার্য এক উপকরণ। বিশেষ করে সনাতন পদ্ধতিতে ধান পরিমাপসহ কৃষি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হতো বেতের তৈরি এই ধামা। তবে প্লাস্টিক পণ্যের ভিড়ে তা এখন বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহ, বাজারে চাহিদা কম ও আধুনিক বিকল্প সামগ্রী সহজলভ্যতা, সব মিলিয়ে দিন দিন নিভে যাচ্ছে এই শিল্পের আলো। বাধ্য হয়ে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা।
গত সপ্তাহে এক বিকেলে বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া বাজারে হঠাৎ চোখে পড়ে এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের এক নিদর্শন। বাজারের এক প্রান্তে বসে বেতের ধামা তৈরি ও বিক্রি করছিলেন কারিগর রবিন দাস। কথা বলতেই উঠে এলো তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও দুঃখগাথা কথা।
রবিন দাস জানান, “তার বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর এলাকায়। বাপ দাদার আমল থেকে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত তিনি। পেশাটি শুধু তার জীবিকা নয়, বরং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এক শিল্প সভ্যতা। প্রতিটি বেতের ধামা তিনি বিক্রি করেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তবে বাজারে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন আধুনিক ঝুড়ির সহজলভ্যতার কারণে ক্রেতারা এখন আর বেতের ঝুড়ি বা ধামার প্রতি আগ্রহ দেখায় না।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আগে মাটির ঘরে ধানের গোলায় কিংবা বাজারে ধান মাপার জন্য বেতের ধামা খুব দরকারি পণ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন সবকিছু বদলে গেছে। কেউ আর বেতের ধামা ব্যবহার করতে চায় না। তার ওপর বেতের দামও বেড়ে গেছে, তাই এগুলি তৈরি করতে খরচও পড়ে বেশি। একারণে একসময়ের গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে থাকা বেতের ধামা আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।”
ডুমুরিয়া মাগুরখালী মাদারতলা পল্লী শ্রী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ মল্লিক বলেন, “বহু বছরের শ্রম, দক্ষতা ও শিল্পির হাতে গড়া বেতের ধামা এখন সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। যদি সরকারি উদ্যোগে কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যায়, তবে এখনো এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সুরখালি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, “হঠাৎ সামনে বেতের ধামাটি দেখতে পেয়ে ৬শ’ টাকা দিয়ে ক্রয় করলাম। প্রাচীন স্মৃতি হিসেবে এটি আমার সন্তানদের দেখাতে চাই।”
খুলনা গেজেট/এনএম

