মৌসুম প্রায় শেষ। আর কিছু দিনের মধ্যে বাজারে আসবে নতুন পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেই মজুতদারদের আড়তে সংরক্ষণ করা পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। আর এই আশঙ্কায় মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে এ পণ্যের। নতুন পেঁয়াজ আসার আগে যতটা চড়া দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নেওয়া যায়। এমনটাই জানিয়েছে কয়েকজন আড়তদার। এ কারণেই সপ্তাহ খানেক আগে যে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। হঠাৎ করে এমন চড়া দাম হাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
আড়তদাররা বলছে, মৌসুম শেষ ও উৎপাদন কম। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও বন্ধ। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছে কী কারণে দাম বেড়েছে সঠিকভাবে বলতে পারছি না। ক্রেতাদের অভিযোগ মজুত সিন্ডিকেট আর ঠুনকো অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে এ পণ্যের দর।
গতকাল বুধবার নগরীর ময়লাপোতা, গল্লামারী সহ বিভিন্ন বাজারের এমন চিত্র দেখা যায়। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। তবে ছোট পেঁয়াজ বা নিম্নমানের এ পণ্য ১০০ টাকায়ও মিলছে হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে। অন্যদিকে সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজারের আড়তে এ পণ্য ৯৫ টাকা থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আকারভেদে এ পণ্যের দামের ব্যবধান ১৫ থেকে ২৫ টাকা। বাড়তি দরের কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, “৮০ টাকা দরের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা এর উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এটা সিজনাল কারণে নাকি সিন্ডিকেটে কারণে বাড়ানো হয়েছে।”
গল্লামারী বাজারে বাজার করতে আসা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, “গ্যাস ঝালাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতে হয়। আয়-ব্যায় হিসেব করে চলতে হয়। সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়ে যায়। এরপর আবার মাঝে মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের।”
সোনাডাঙ্গা পাইকারি আড়তে মেসে’র জন্য পুরো মাসের পেঁয়াজ, রসুন, আদা ক্রয় করতে আসছিলেন উর্মিলা ও তার বান্ধবিরা। তারা বলেন, “দাম বেশি থাকার কারণে চাহিদার তুলনায় কয়েক কেজি কম ক্রয় করেছি। ১০৫ টাকা দরে ৩০ কেজি পেঁয়াজ নিয়েছি।”
ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের খুচরা বিক্রেতা আলতাফ বলেন, “সিজন শেষ এ কারণে দাম চড়া। দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে দাম বাড়বে ছাড়া কমবে না। দাম বেশি থাকলে বেঁচাকেনা কমে যায়। দাম বাড়ার কারণে মাত্র ৫০ কেজি পেঁয়াজ তুলেছি। অর্ধেকের মত বিক্রি হয়েছে।”
সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, “ভারতীয় এলসি বন্ধ। দেশি পেঁয়াজের আমদানি কম। প্রান্তিক পর্যায়ে নতুন পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়েছে। যদি ভারত থেকে আমদানি করা যায় তবে কমবে এ পণ্যের দাম। বাড়তি দরে বেঁচাকেনা অনেক কমেছে। পূর্বে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ সর্বনিম্ন বিক্রি হতো। এখন হচ্ছে দুই থেকে তিন মণ।
এ আড়তের সালাম বাণিজ্য ভান্ডারের লাল মিয়া বলেন, “৪০ থেকে ৪৫ দিন পর দাম কমতে পারে। কেননা সে সময় থেকে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। ফরিদপুর জেলাসহ অন্য জেলা থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনেছি। সেখানেও পেঁয়াজের রয়েছে।”
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুলনার ফিল্ড অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বাজারে আমদানি কম। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও বন্ধ। এ কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে মূল্য কমতে শুরু করবে।”
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, “বাজারে যাদের পুরাতন ছিল বা সঞ্চয় ছিল সেগুলো আসছে। পেঁয়াজের চারা রোপণ প্রস্তুতি চলছে। অল্প কয়েকজন শুরু করেছে। ব্যাপক হারে শুরু হতে ১৫-২০ দিন লাগবে। ২৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন দুই হাজার তিনশ’ ৪৬ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা। গত বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ছিল।”
খুলনা গেজেট/এনএম

