মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২
খুলনায় সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক

‘মলিন ময়লাযুক্ত নোট ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাশসেল সোসাইটি গড়ে তোলার চেষ্টার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন, ক্যাশ উৎপাদনের সাথে কয়েক হাজার কোটি টাকা জড়িত। এর পেছনে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যগত বিষয় রয়েছে। প্রতি বছর টাকা উৎপাদন করতে বিপুল সংখ্যক অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। পৃথিবীর মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠান টাকা ছাপানোর বিশেষায়িত কাগজ, কালি এবং সিকিউরিটি থ্রেড তৈরি করে থাকে। বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পর ৯ প্রকার নোট নতুন ডিজাইনে ছাপার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এখনও সকলের হাতে নতুন ছাপানো নোট পৌছে দিতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাগজ, কালি ও সিকিউরিটি থ্রেড সরবরাহ করে থাকে তারা যথাসময়ে আমাদের কাছে সরবরাহ করতে পারছে না। যার ফলে আমরা অনেক মোলিন নোট পকেটে বহন করে দৈনন্দিন কাজ করছি। এই নোট ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।

আমাদের অনেক ধরনের সংক্রামক ব্যধির সূত্রপাত হয় বহুল ব্যবহৃত মোলিন ময়লাযুক্ত নোট ব্যবহারের ফলে। আসুন আমরা এই মোলিন ময়লাযুক্ত নোট ব্যবহার পরিহার করে ডিজিটাল পেমেন্টে নিজেকে অভ্যস্ত করি। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ে তুলি। এর মাধ্যমে অর্থনীতি ডিজিটাল হোক। দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হোক এবং আমাদের জীবন আরও বেশি স্বাচ্ছন্দময় হয়ে উঠুক। ক্যাশ ব্যবহার করব ক্যাশলেসভাবে। ক্যাশের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা শিল্পকলা একাডেমীতে খুলনা জেলায় ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ (ইধহমষধ ছজ লেনদেন সম্প্রসারণ) শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে লীড ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের উদ্যোগে নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাত ডিজিটালাইজট করার বিষয়ে তিনি তাগিদ দিয়ে বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আমরা স্বপ্ন দেখছি। ধাপে ধাপে যদি খাতওয়ারি কাজ করতে পারি তাহলে ১০ বছর লাগবে না। আসুন সবাই একটি ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়।

খুলনা অঞ্চল শিল্প ও বাণিজ্যের একটি ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। পাট শিল্পের সূতিকাগার বলা হয় খুলনা অঞ্চলকে। এখানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ সিমেন্ট, সারসহ বিভিন্ন শিল্পের প্রসার রয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এই অঞ্চলে অনেক বেশি গতিশীল। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে এই গতিশীলতা হোচট খেয়েছে। তবে সম্মিলিত প্রয়াসে সেই ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অর্থনীতি যতো গতিশীল হবে, লেনদেনের মাত্রা ততো বাড়বে। এই লেনদেনকে যদি স্বচ্ছল, সহজীকরণ এবং নিরাপদ করতে না পারি তবে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। আমাদের চলার পথ বাধাগ্রস্থ হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আজকের স্লোগান একটি ক্যাশ লেস সোসাইটি গড়ার। যার মাধ্যমে অর্থনীতির গতি সঞ্চার করতে চায়। দেশের জন্য একটি পেমেন্ট ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই পেমেন্ট সিস্টেমটাকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। পেমেন্ট ইকো সিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করে। ২০১১ সালে এলএফএস যাত্রা শুরু করে। এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এখন আমরা আন্দোলন করছি ক্যাশলেস সোসাইটি করার জন্য। আগে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যদি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেন হবে এটা নিশ্চিত করতে পারবো না। এ জন্য আমরা আগে চাচ্ছি আমাদের পেমেন্ট সিস্টেমগুলোকে উন্নতি করতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক রাফেজা আক্তার কান্তা’র সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনার নির্বাহী পরিচালক মোঃ রুকনুজ্জামান ও সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ রফিকুল ইসলাম। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদেও মধ্যে বক্তৃতা করেন সৌমিতা বোস ও মোঃ জামিল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন