আজ শনিবার মধ্য রাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ শিকারে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা। শরণখোলা অঞ্চলের জেলেরা ঋণের বোঝা এবং জলদস্যু আতঙ্ক মাথায় নিয়ে ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা ইতোমধ্যেই সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলেরা ফিশিংবোটে তাদের জাল ও প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী বোঝাই করছেন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার শেষ মুহূর্ত আজ ২৫ অক্টোবর মধ্য রাতে সাগরে ছুটবে ফিশিংবোট বহর।
ঋণের বোঝা এবং জলদস্যু আতঙ্ক মাথায় নিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন জানিয়ে শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন বলেন, “এবারের ইলিশ মৌসুমে জেলেরা নদী ও সাগরে তেমন ইলিশ পায়নি। সাগরে কয়েকদফা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি। ক্রমাগত লোকসান দিয়ে জেলে মহাজনরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে, দীর্ঘ কয়েক বছর পরে আবার সাগর ও সুন্দরবনে জলদস্যুরা তাদের তাণ্ডব শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জলদস্যুরা অনেক জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে। জেলে মহাজনদের মধ্যে জলদস্যু আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে আবুল হোসেন জানান।
শরণখোলা উপজেলার রাজেশ্বর গ্রামের জেলে আঃ সোবহান, খোন্তাকাটা গ্রামের জেলে খালেক মুন্সি, সাউথখালী গ্রামের জেলে আঃ জলিলসহ অনেক জেলে বলেন, ‘গত ২২দিন মাছ ধরতেনা পেরে তারা বেকার হয়ে পড়েছিলেন। মহাজন ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে।’
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, উপকূলের জেলেরা এবার ভালো নেই। ইলিশ মৌসুমে কাক্ষিত মাছ না পেয়ে অধিকাংশ জেলে মহাজন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আশায় বুক বেধে শনিবার মধ্য রাতে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন জেলে মৎস্যজীবীরা।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, এবারের ২২দিনের ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শনিবার মধ্য রাতে উঠে যাবে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় দুই লাখ মিটার জাল জব্দ করে ধংস করা হয়েছে। আশা করা যায় নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা আশানুরূপ মাছ পাবে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান।
অপরদিকে, ডুমুরিয়া থেকে সুব্রত কুমার ফৌজদার জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ শনিবার মধ্যরাতে ডুমুরিয়ার ৬৫টি ফিশিংবোট বহরে সমুদ্রে ছুটবে জেলেরা। রবিবার সূর্যোদয়ের আগেই পৌঁছে যাবে দুবলার চরে। সেখান থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যাবেন তারা।
এবার খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ৬৫টি ফিশিং ট্রলার বহরে সমুদ্রে যাচ্ছে ৬৬৫জন জেলে। এ এলাকার অধিকাংশ জেলেরা মোংলা হয়ে সমুদ্রে যাত্রা করছেন। ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার মধ্যরাতেই সমুদ্রে ছুটবেন তারা। দুবলার চর, আলোরকোল, মাঝের চর, শ্যালার চর ও নারিকেলবাড়ীয়া চরে জেলেদের অবস্থান নির্ধারণ করেছে বনবিভাগ।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান জানান, ডুমুরিয়ার জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ২২ দিন মৎস্য আহরণ থেকে বিরত ছিলো। এবার ৬৫টি আর্টিশনাল নৌযানের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। নির্বিঘেœ এবং কোন ধরণের হয়রানি ছাড়া জেলেরা সমুদ্রে মাছ আহরণ করবে। এই প্রথম ডুমুরিয়া থেকে নৌযানের অনুমতিপত্র নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছে জেলেরা।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
