‘রেলের মান শীর্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেবাখাতে চাকরি নিয়ে জীবন শেষ। ডিউটি করতে করতে মরে গেলাম। আট বছরের চাকরি জীবনে এক পয়সাও বেতন বাড়েনি। চাকুরি স্থায়ীকরণও করা হচ্ছে না। সরকারের প্রণোদনার কোন কিছুই আমরা পাই না। ছুটি যেখানে সোনার হরিণ। মাসিক ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা বেতন, ঈদ বোনাস আর একটা বৈশাখী ভাতা ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সরকারি কর্মচারীরা। এ কেমন বৈষম্য? যে বেতন পাই তা দিয়ে স্ত্রী, সন্তান, বাপ, মা নিয়ে টানা হ্যাচরায় চলে সংসার। এর উপর তিন মাস বেতন বন্ধ। কবে বেতন পাব তারও কোনো উত্তর মিলছে না, কার কাছ যাবো। ধার-দেনা করে, খেয়ে না খেয়ে কোনমতে জীবন চলছে। দোকানদাররা আর বাকি দিতে চায় না। নানা এই দুশ্চিন্তায় সারাক্ষণ মাথার ভেতর ভোঁ-ভোঁ করছে। লোকবল কম থাকলে অনেক সময় নির্ধারিত ডিউটি শেষে অতিরিক্ত তিন-চার ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। এর জন্য দেওয়া হয় না কোনো ওভারটাইম।’ এখন মনে হয় জীবনের শেষ ছুটির পরও রেলের কাছে থেকে যাবে আমাদের পাওনা।
এভাবে নিজের কষ্টের কথাগুলো এক নাগাড়ে বললেন নগরীর ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিং-এর গেট কিপার মোঃ ইউনুস। তিন মাস বেতন না পেয়ে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, স্বামী পরিত্যাক্তা এক বোন এবং তার ছেলেকে নিয়ে এখন তার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বেশিরভাগ সময়ে পান্তাও জোটে না কপালে।
জানা যায়, ইউনুসের মত প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে রেলওয়ের এক হাজার ৫০৫ জন গেট কিপার গত তিন মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরমধ্যে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ৭৫৩ জন এবং পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ৭৪৭ জন। খুলনা এবং যশোর অঞ্চল মিলে রয়েছে ১৪৭ জন।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, রেলওয়ের যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রেল মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে মান শীর্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় এ সকল গেট কিপারদের। প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়লেও বেতন বৃদ্ধিসহ কোন সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি তাদের। স্থায়ীকরণ করা হয়নি তাদের চাকুরি।
এছাড়া প্রতিবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে একনেকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ার আগ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় বেতন ভাতা। তখন পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যেন থমকে যায় তাদের। গতবছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টানা ৭ মাস বেতন ভাতা না পেয়ে মানবতার জীবনযাপন করে প্রকল্পের দেড় হাজার গেট কিপার। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। জুলাই থেকে তারা বেতন পাচ্ছে না। কবে নাগাদ মিলবে বেতন তারও উত্তর মিলছে না।
সূত্রমতে, সিটি এলাকায় রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনকারী গেট কিপারদের নির্ধারিত বেতন ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা আর সিটির বাইরে দায়িত্ব পালনকারী গেট কিপারদের মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়া ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হয়। এর বাইরে অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা তাদের নেই।
রেলওয়ের মান শীর্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক বীরবল মন্ডল খুলনা গেজেটকে বলেন, “চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়াই বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। একনেকে ওঠার পর প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিলে বেতন, ভাতা প্রদানে কোনো বাঁধা থাকবে না। আর হয়ত এক মাস সময় লাগতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব খাতে চাকুরি না হওয়াতেই তাদের সুযোগ সুবিধা সীমিত। নিয়োগের সময় তাদেরকে সবকিছু বলে দেওয়া হয়।”
খুলনা গেজেট/এনএম

