বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে দোকান ও পাকা ভবন

বটিয়াঘাটায় সরকারি খাল জলাশয় অবৈধ দখলে

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি

খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার অধিকাংশ নদী ও খালের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কচুরিপানা জমে থাকায় এবং দখল দূষণে খালগুলো পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। এতে করে দিন দিন খালগুলোর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। ফলে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমন অবস্থা চলে আসলেও নদী ও খালগুলো রক্ষায় নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ। এর ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতা আশঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ৮২টির বেশি খাল ও জলাশয় রয়েছে। এর ভেতর ৫০টি খালের ইজারা দেওয়া হয়। বাকি ৩২টি রেকর্ডিয় খাল ও জলাশয়গুলো অবৈধ প্লট ব্যাবসার নামে ভরাট করা হয়েছে। খাল ভরাট করে তার ওপর দিয়ে প্লটের রাস্তা নির্মাণ করে দখল করে নিচ্ছে প্লট ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া অধিকাংশ খাস খালে দীর্ঘদিন যাবৎ কচুরিপানা ভরাট হয়ে আছে। দেখে মনে হবে পুরো খাল জুড়ে সবুজে ঘেরা কোনো মাঠ অথবা চলছে কচুরিপানার প্রদর্শন। খালের কোথাও পানির দেখা নেই। কিছু খালে আবার কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ, মাছি ও মশার জন্ম হচ্ছে। এই পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ছাড়া কিছু খাল নাম মাত্র ইজারা নিয়ে ইজারাদার অথবা গায়ের জোরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজ দখলে রেখেছেন। বটিয়াঘাটা সদর হেতালবুনিয়া খালটির দু’পাশে ভরাট করে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে শত শত দোকানঘর ও ভবন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আড়াআড়ি অবৈধ ভাবে বাঁধ, খন্ড খন্ড টোনাজাল, নেটজাল, পাটাজাল, চাকজাল, কারেন্ট জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে মাছচাষ করে চলেছে। তাছাড়া ছোট ছোট খালগুলো যে যার মতো দখল করে গড়ে তুলেছেন বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা, এমনকি পাকা প্রাচীরও। যার ফলে দখল দূষণে ও কচুরিপানা জমে থাকায় খালগুলো পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে।

সদর হাটবাটি হাটের ময়লা আর্বজনা খালে ফেলে খাল ভরাট করে চলেছে। এতে খালের গভীরতা সংকটে পড়েছে। একদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ঐ এলাকায়। আর অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে খালে পানি ধারণ ক্ষমতা না থাকায় সেচ সংকটের কারণে রবি ও বোরো চাষ ব্যহত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন যাবৎ হেতালবুনিয়াখাল, বয়ারভাঙ্গাখাল, হোগলবুনিয়াখাল, আমতলাখাল, বাদামতলাখাল, ইনেদারখাল, ঠাকুনবাড়ীরখাল, সমুদ্রেরখাল, গোগেরখাল, রামদিয়াখাল, হোগলাডাঙ্গাখাল, বাঁশবাড়িয়াখাল, অধিকাংশ সরকারি খাস খালে কচুরিপানা জমে থাকায় এবং দখল দূষণে খালগুলোর পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে গেছে।

জাতীয় কৃষক সমিতির খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় জানান, নদী খালগুলো যাদের দেখার কথা সেই কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। যে কারণে নদী খালগুলোতে কচুরিপানা জমে থাকে এবং দখল হয়ে যাচ্ছে। নদী খাল সংরক্ষণ আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবেশ, চাষাবাদ ও জীব বৈচিত্র্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী গোপাল কুমার দত্ত বলেন, “এখনো পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি কচুরিপানার অসুবিধার বিষয়ে আমাদের জানায়নি। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের নজরে দেয়া হবে।”

এ ব্যপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শোয়েব শাত-ঈল ইভান বলেন, “ইতোমধ্যে কিছু খালের অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। উপজেলায় যে সকল সরকারি রেকর্ডিয় খাল রয়েছে সেগুলো সার্ভেয়ার দ্বারা ম্যাপ অনুযায়ী চিহ্নিত করে সীমানা পিলার স্থাপন পূর্বক সকল সরকারী খাল অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন