বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

সমস্যায় জর্জরিত অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

গাজী আবুল হোসেন

যশোরের অভয়নগরের শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নওপাড়ায় একমাত্র সরকারি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও বিভিন্ন উপজেলার রোগীদের ভিড় সামলাতে হয় এখানে।

কাগজে-কলমে ৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে। শিল্প ও বাণিজ্য নগরী হওয়ার কারণে বহু জেলার লোক এই অঞ্চলে বসবাস করে কর্মের খাতিরে। কয়লা শ্রমিক, ঘাট শ্রমিক, মিল শ্রমিক, বিভিন্ন লোক বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, জেলা থেকে এসে এখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকে। ফলে বাস্তবতায় হাসপাতালটি ১০০ শয্যার চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। তার উপর রয়েছে তীব্র জনবল ও ভবন সংকট। ফলে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতেহয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে আছে মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক। এরমধ্যে ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি, অসুস্থতা বাবদ সবসময়ই কয়েকজন ডাক্তার থাকেন অনুপস্থিত। এর ফলে নয়/দশ জন চিকিৎসককেই এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিতে হয়।

সরে জমিন দেখা গেছে, যে সমস্ত চিকিৎসকরা রাতে ডিউটি করেছেন তাদেরকে আবার দিনের বেলায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যেটা একেবারেই অমানবিক। অনেক চিকিৎসক রাতে জরুরি সেবা প্রদান করার পর দিনে ডিউটি করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। এর ফলে ৮-৯ জন চিকিৎসককেই সেবা দিতে হয়। বহির্বিভাগে কমপক্ষে ৫ শতাধিক এবং ভর্তি ৮০ থেকে ৯০ জন রোগীদের স্বল্পসংখ্যক স্টাফ দিয়েই সেবা দিতে হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। ভবনের অভাবে পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে রোগী রাখতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। তাতেও সংকলন না হওয়ায় সারাক্ষণই শয্যা সংকট লেগেই থাকে। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়ি পর্যন্ত রোগী থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে ডেঙ্গুর উর্ধ্বগতিতে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এরফলে রোগীর ওষুধপত্র, সজ্জা, সেবা ও খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সার্বিক ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক রাখতে প্রতিনিয়ত চিকিৎসক ও সেবিকাদের নাজেহাল অবস্থা, হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুধু ভর্তি রোগী নয় বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ শতাধিক রোগের চিকিৎসা দিতে এই স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মী দিয়ে পেরে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এরপরেও সামান্য ত্রুটি হলেই চিকিৎসকদের সম্মুখীন হতে হয় তিরস্কারের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগী ছিল ৮৯ জন, তার আগের দিন ছিল ১০১ জন। বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়েছে ৫২৫ এবং ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ২৩ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালের ভবন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, হাসপাতালটিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে মাত্র দু’জন, ভর্তি রোগী থাকে ৮০ থেকে ৯০ জন তাদের সঙ্গে রোগীর স্বজনরা থাকে কমপক্ষে দুই থেকে তিনজন করে। ফলে হাসপাতালটিতে অবস্থান করেন তিন শতাধিক লোক। ভর্তি রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন এবং রোগী দেখতে আসা লোকজন মিলিয়ে প্রায় সহস্রাধিক লোকের আনাগোনা চলে হাসপাতালটিতে। দুজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর পক্ষে এই চাপ সামাল দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

চিকিৎসকদের দাবি সরকার নির্ধারিত রোগীর চেয়েও দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর সেবা দেওয়ার পরও সামান্য ত্রুটি হলেই রোগী ও তাদের স্বজনদের নিকট থেকে শুনতে হয় নানান ভৎসনা, গালমন্দ ও তিরস্কার। অনেকে অশোভনীয় আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ হাসপাতালে ৫০ জন রোগী ভর্তি থাকার কথা এবং তাদের জন্যই খাদ্য বরাদ্দ থাকে অথচ ভর্তি থাকে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী খাবার দাবি করে। এরপরেও সেবা দানে কোনো রকম সামান্য ঘাটতি হলেই হতে হয় তিরস্কারও লাঞ্ছনার শিকার।

এ ব্যাপারে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার আলিমুর রাজিব বলেন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে রোগীদের সেবা করে যাচ্ছি। নানা সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি উত্তম সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সবকিছু সব সময় সামলে ওঠা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। নানামুখী অভিযোগ তো আমাদের বিরুদ্ধে সব সময় থাকেই, যারা সচেতন নন তারা প্রতিনিয়তই আমাদের সমালোচনা করতেই থাকেন সার্বিক সমস্যা সংকট মোকাবেলায় আমরা যে যুদ্ধ করছি এ বিষয়ে সাধারণ লোক খবর রাখেন না, আমাদের ভোগান্তি সমস্যা সংকটের কথা জানেন না বলেই আমাদের ভুল বোঝেন এবং আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করি না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন