চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে নাকাল খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। খুলনাসহ ২১ জেলায় গতকাল বুধবার রাত ৮টায় ঘাটতি ছিল ৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ থাকছে দফায় দফায়। দিন-রাতের তফাৎ নেই, যখন-তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আদানির একটি করে ইউনিট বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্রিড খুলনা সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ূন কবীর আব্বাছী খুলনা গেজেটকে বলেন, বিদ্যুতের সংকট চলছে। আজ (গতকাল) রাত থেকেই ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। আমি যতোটুকু জানি রামপালের দুটি ইউনিট বন্ধ ছিল। এখন কয়লা এসেছে। ওটাও চালু হবে। ওদিকে আদানি থেকেও একটি ইউনিট মনে হয় বন্ধ ছিল ওটাও চালু হওয়ার কথা। সেখানে একটি ইউনিট চালু আছে, আরেকটি হয়তো চালু হবে। তাহলে সংকট কিছুটা মিটবে।
ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন খুলনা গেজেটকে বলেন, আমরা গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ বরাদ্দ পেয়ে থাকি। কিন্তু এখন সরবরাহ কম পাচ্ছি। বুধবার রাত ৮টায় ওজোপাডিকোর আওতাধীন খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৭৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি রয়েছে ৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ জাকিরুজ্জামান খুলনা গেজেটকে বলেন, লোডশেডিং রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে একটু ঝামেলা হচ্ছে। ভারতের আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা ও কয়লা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে শুনলাম। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) আনোয়ারুল আজিম খুলনা গেজেটকে বলেন, একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। দুটি ইউনিটের প্রথম ইউনিট ফুল লোডে চলছে, আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এটিও দ্রুত চালু হবে।
গরীর সোনাডাঙ্গা বাসিন্দা নাজিয়া সুলতানা বলেন, সম্প্রতি ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভীষণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট ও রিসার্চের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে। গরমে ফ্যান বা ইন্টারনেট না থাকায় ঘুমানো ও মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ও সাহেবের কবরখানা এলাকার নূর মোহাম্মদ বলেন, তীব্র গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহূর্ত চলা বড় দায়। সারাদিনের কাজ শেষে রাতে মানুষ ঘুমাতে যায়। কিন্তু সেই সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট একেবারে মেনে নেওয়া যায় না। তছাড়া এখন সর্বত্র প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ব্যবহারের পূর্বে টাকা দিতে হয়। আমার কেনা টাকার বিদ্যুৎ এভাবে চোর-পুলিশ খেলা খেলবে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
নগরীর শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা রিতা মাকসুদা বলেন, এখনকার আবহাওয়া একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না। দুই দিন আগেও বৃষ্টি হচ্ছিল, আবার আজ প্রচণ্ড রোদে যেন আগুন ঝরছে। তার ওপর দিন-রাত বিদ্যুৎ থাকছে না, ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা যারা শহরের ফ্ল্যাটে থাকি, চারপাশে দেয়ালঘেরা এই জীবনে একটু বাতাসের জন্য বিকেলে ছাদে উঠি, কিন্তু এখন সেই সুযোগও যেন হারিয়ে গেছে।
রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকার সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন পপি বলেন, তীব্র গরমে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। তাপমাত্রার পারদ যেভাবে দিনে দিনে বাড়ছে, তাতে ফ্যান ছাড়া এক মুহূর্তও থাকা যায় না। সারাদিন স্কুলে ক্লাস নেওয়ার পর যখন বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নেওয়ার কথা, তখনই দেখি বিদ্যুৎ নেই। ঘামে ভিজে ক্লান্ত শরীরে তখন আর কিছুই করার থাকে না। তার ওপর সংসারের নানান কাজ সামলাতে হয়। এছাড়া রাতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সন্তানদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে যেন একেবারেই নাজেহাল অবস্থা।
খুলনা গেজেট/এনএম

