খুলনা-যশোর মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিং। এর দু’পাশের প্রায় ১০০ ফুট সড়ক বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। তবে বৃষ্টি নামলে যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এখান থেকে যাতায়াতকারী শ’ শ’ যানবাহনের চালক এবং হাজার হাজার পথচারী। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলওয়ের সীমানার ভিতর হওয়ায় বেহাল অবস্থার দায় নিতে নারাজ সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। অন্যদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে সরজমিনে জানা গেছে, রেলক্রসিং সংলগ্ন সড়কের একপাশে ঐতিহ্যবাহী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট, তেলিগাতী বাইপাস সড়ক, পুরাতন বিআইটি সড়ক, দারোগা বাজার, বনিকপাড়া, দিঘীরপাড়ের প্রবেশদ্বার। অন্যপাশে ফুলবাড়িগেট বাসস্ট্যান্ড, বাজার, আলতাফ প্লাজা এবং হোটেল রেস্টুরেন্টসহ অসংখ্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
রেল কর্তৃপক্ষ বছরের শুরুতে সড়ক খুঁড়ে রেলের পাটি সংযোজন করে দায়সারাভাবে কাজ করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে। এরপর থেকে রেলক্রসে সড়কের দুরবস্থা বাড়তে থাকে।
রেলক্রসিংয়ের দু’পাশে উঁচু-নিচু সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ স্থানটি অতিক্রমের সময় যানবাহনগুলি সর্বনিম্ন গতিতে চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে পারে না চালকেরা। এছাড়া বৃষ্টি হলে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এ সময় জনদুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দু’পাশের সড়ক দেবে রেলের পাত উঁচু হয়ে গেছে। রেললাইনের লেভেল থেকে সড়ক নিচু হয়ওয়ার কারণে রেললাইনের উপর দিয়ে যানবাহন অতিক্রমকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এদিক সেদিক চলে যায়।
গেটকিপার মেহেদী হাসান খুলনা গেজেটকে বলেন, রেললাইন থেকে সড়ক নিচু হয়ে যাওয়ায় যানবাহন অতিক্রম করার সময় দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। রেললাইনের উপর দিয়ে যানবাহন যাতায়াতের সময় স্লিপ করে গাড়ি উল্টে যায়। প্রতিনিয়ত এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমরা একাধিকবার বিষয়টি অবহিত করেছি।
তিনি বলেন, “গত শুক্রবার সকালে বৃষ্টির সময় পর পর কয়েকটি ইজিবাইক উল্টে যায়। এ ঘটনায় ছোট একটি শিশু এবং একজন বৃদ্ধা ইজিবাইক থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। শিশুটির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে।”
রেলক্রসিং সংলগ্ন মুহিত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, “রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এখানকার কাজ করে। রেল লাইনের উপরে এবং দু’পাশের সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এখানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। দ্রুত সংস্কার না হলে যে-কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক খুলনা গেজেটকে বলেন, “সড়কের ওই অংশটুকু রেলওয়ের সীমানাভুক্ত হওয়ায় আমরা স্থায়ীভাবে ওই কাজটা করতে পারি না। আমাদের সীমানার মধ্যে কাজ আমরা করব। তারপরও মাঝেমধ্যে সংস্কার কাজতো করি।” তিনি বলেন, “রেললাইন থেকে রাস্তা নিচু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমরা যদি রাস্তা উঁচু করি, তখন রেল চলাচলে যদি অসুবিধা হলে এর দায়ভার কে নেবে?”
রেলওয়ে খুলনা-যশোর অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী চাঁদ আহম্মেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, “ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত বৃষ্টির কারণে সঠিক উপায়ে সংস্কার কাজ করতে পারছি না। বৃষ্টি কমলে আমরা ঠিক করে দিব। তাছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত মেরামতের কাজ কিন্তু করছি।”
খুলনা গেজেট/এনএম

