খুলনার আতাই নদী। দূর থেকে দেখা মেলে অসংখ্য নৌকার। এসব নৌকায় মানুষ পারাপার হচ্ছে না। একটু কাছে যেতেই দেখা যায় নৌকার দুই প্রান্তে দু’জন জাল টানছে। কোন কোন নৌকায় জাল ফেলছে। নদীর একপ্রান্ত থেকে জাল নিয়ে অন্য প্রান্তে এসে তুলছে। এভাবেই নদীতে রোদ-বৃষ্টিতে জাল ফেলে তারা ইলিশ আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে খুলনার আতাই নদীর তীর থেকে। আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ জন্য শেষ মুহূর্তে জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছে খুলনার নদ-নদীগুলোতে। নদীতে মাছ ধরেই অনেকের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
আতাই নদীতে মাছ ধরা জেলে উত্তম দাস খুলনা গেজেটকে বলেন, “সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে নদীতে জাল ফেলি। ভাগ্য ভালো থাকলে জোয়ারের সময় কেজি সাইজের দুই-একটা ইলিশ পাই, সাথে কিছু ছোট মাছও মেলে। সেই মাছ বেঁচে যা পাই, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে। আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি এই মৌসুমের জন্য, কারণ বছরের অন্য সময়ে তেমন কিছু হাতে আসে না। অথচ এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকার মতো ইলিশ বিক্রি করতে পেরেছি। একটা নৌকায় আমরা দুইজন মিলে মাছ ধরি। ওই আয়ে আমাদের দুই পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিনের পরিশ্রমের সাথে জাল ও নৌকা বানাতে ধার-দেনা তো আছে। তার ওপর পরিবারের খরচ আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যেয়ে হিমশিম খেতে হয়। তারপরও নদীর ওপর নির্ভর করেই দিন চালাতে হয় আমাদের। কোনো রকমে দিন চলে যায়।”
একই নদীতে ইলিশ ধরতে আসা জেলে বিশ্বজিৎ বলেন, “বেশ কয়েক বছর হলো আমি ইলিশ ধরার জন্য নদীতে আসি। আগে যখন বর্ষা আসত, তখন মনে হতো ঈদের মতো আনন্দ নেমে এসেছে আমাদের ঘরে। কারণ, বর্ষা মানেই নদীর পানিতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। নৌকা ভরে মাছ নিয়ে ঘরে ফিরতাম, বাজারে বিক্রি করে ভালো আয় হতো, সংসারেও স্বস্তি আসত। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। পানিতে আর আগের মতো মাছ ওঠে না। প্রতিবার বর্ষা আসার আগে মনে করি এবার মাছ ধরা বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজে চলে যাবো। কারণ সংসারের খরচ মেটানো, ধারদেনা শোধ করা-সবকিছুই এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সত্যি কথা বলতে, বর্ষা এলেই নদী আমাকে নেশার মতো টেনে নিয়ে আসে।”
আতাই নদীসহ ইলিশ আহরণ হয় খুলনার ২০টি নদ-নদীতে। জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, খুলনার পশুর, শিবসা, ভদ্রা, ঢাকী, চুনকুড়ি, ঝপঝপিয়া, কাজীবাছা, শৈলমারী, গেংরাইল, হরি নদী, ভদ্রা নদী, দেলুটি, হাবরখানা, ভৈরব, রূপসা, আতাই, মজুদখালী, কপোতাক্ষ, কয়রা ও শেখের বাড়িয়া নদীতে জেলেরা ইলিশ আহরণ করেন। এসব নদীতে ৩ হাজার ৪৫০ জন জেলে শুধু ইলিশ আহরণ করে থাকেন।
নগরীর নিউমার্কেটের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে, কেজির নিচে ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা দরে, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে, ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার টাকা দরে এবং ৩০০-২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান বলেন, “খুলনার ২০টি নদ-নদী থেকে ইলিশ আহরণ করে থাকেন জেলেরা। আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখন জেলেদের জালে আগের থেকে বেশি ইলিশ উঠছে।”
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
