বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২
আজ খুলনায় আসছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল

ডুমুরিয়া হতে পারে গল্লামারী মৎস্য খামারের বিকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুবি ও ডুমুরিয়া প্রতিনিধি

খুলনার গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার দাবি দীর্ঘদিনের। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে খুলনার নাগরিক সংগঠনগুলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় অবস্থিত এই খামার থেকে আশপাশের উপজেলায় পোনা পরিবহনও জটিলতার কথা জানিয়েছেন মৎস্য চাষীরা। খুলনা মহানগরীর ভেতরে মৎস্য উৎপাদন খামারও যুগের চাহিদার সঙ্গে বেমানান। এ অবস্থায় গল্লামারীতে অবস্থানরত মৎস্যবীজ খামারের বিকল্প স্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডুমুরিয়া মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারই হতে পারে এর উত্তম বিকল্প। খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কের কোষঘেষে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ১৯৮৫ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই সেটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সামান্য কিছু সংস্কার করলেই ডুমুরিয়ার এই খামারেই পোনা উৎপাদনসহ সব ধরনের গবেষণা কার্যক্রম চালানো সম্ভব। খুলনার শীর্ষ মৎস্য উৎপাদন উপজেলা ডুমুরিয়াতে খামারটি স্থাপন হলে মৎস্য চাষীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনটি সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের উপজেলায় পোনা পরিবহনও সহজতর হবে।

এদিকে গল্লামারী মৎস্য খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার দাবি বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি আজ ৩০ সেপ্টেম্বর খুলনা আসছেন। কমিটির সদস্যরা সকাল সাড়ে ১০ টায় এসে পৌঁছাবেন। মৎস্য খামার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবেন ঢাকায় ফিরে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সভাপতিত্বে এক পর্যালোচনা সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থী ও খুলনাবাসীর দাবি পূরণ হবে বলে সকলে আশাবাদি।

এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম জানান, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার অভ্যন্তরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থিত। তিনদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিবেষ্টিত এই জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সৌন্দর্য, নিরাপত্তা এবং পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। গল্লামারী মৎস্য খামারটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন ও ফিল্ড ল্যাব হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার্থে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা আমরা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে যথাযথভাবে তুলে ধরেছি। মৎস্য অধিদপ্তর তাদের প্রয়োজনীয়তা পার্শ¦বর্তী ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের মাধ্যমে অনায়াসে মেটাতে পারে, জানান এই শিক্ষাবিদ।

আমাদের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি সুব্রত কুমার ফৌজদার জানিয়েছেন, অনেকটা অযত্ন ও অবহেলায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এখানকার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের কার্যক্রম। দক্ষ জনবল, পুকুর সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি উপকরণের অভাবে আশানুরূপ পোনা উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে খামারটিতে।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কোল ঘেঁষে ১৯৮৫ সালে সাড়ে ২২ বিঘা সম্পত্তির উপর সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় খামারটি। এখানে মাছের পোনার চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায় সরবরাহের লক্ষ্যে খামারটি স্থাপন করা হয়। খামারে রয়েছে ছোট বড় ৫টি পুকুর। রয়েছে দ্বিতলা বিশিষ্ট ১টি অফিস ভবন, ১টি হ্যাচারি ঘর ও ১টি জাল শুকানো ঘর। রেণু থেকে ধানি পোনা করতে পুকুরে পানির পরিমাণ লাগে প্রায় আড়াই ফুট। কিন্তু পুকুর সংস্কার না করায় বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। এতে উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হয়। অযত্ন অবহেলায় খামারে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন ঘাস-খড়ের অভয়ারণ্য! এদিকে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় অতিবৃষ্টি হলেই প্লাবিত হয় পুকুরগুলো। পুকুরগুলো সংস্কার বা খনন হয়নি দীর্ঘদিন।

গতকাল সোমবার সকালে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে সরেজমিনে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫জনের মধ্যে একজনকে পাওয়া যায়। খামার ব্যবস্থাপক রয়েছেন অসুস্থতাজনিত ছুটিতে। শ্রমিক দিয়ে চলছে খামারের পুকুর পরিচর্যার কাজ।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান জানান, এ খামারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে শুধু ডুমুরিয়া নয়, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের মৎস্য চাষীরা উপকৃত হবেন। এছাড়া দক্ষ জনবল, পুকুর সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি উপকরণের যোগান দিতে পারলে পোনা উৎপাদনে ডুমুরিয়া মৎস্য খামারটি গল্লামারীর চেয়েও অধিক কার্যকরী হতে পারে বলে অভিমত নাগরিক নেতৃবৃন্দের।

এদিকে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে খুলনার বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান খুলনা গেজেটকে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভে বাস্তবতার আলোকে মৎস্য খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দীর্ঘ তিন যুগেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই নতুন করে কোন অজুহাত খুলনাবাসী আর শুনতে চায় না। কমিটির সদস্যরা আজ ৩০ সেপ্টেম্বর খুলনা আসলে উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্মারকলিপি দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সিনিয়র সহ-সভাপতি সরদার আবু তাহের বলেন, খুবির সীমানার ভেতরে অবস্থিত ১০.৩৫ একর আয়তনের এই মৎস্য খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে আছে। বর্তমানে খুবির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি হলেও হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। ফলে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। জীববিজ্ঞান ভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র্র সমস্যা তৈরি করেছে। তাই যৌক্তিক এই দাবি পূরণে কোন টালবাহনা খুলনাবাসী সহ্য করবে না, আমরা চাই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন