১৯৬৬ সালে খুলনার খানজাহান আলী থানা শিরোমণিতে ৪৪ দশমিক ১০ একর জায়গা নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, প্লট সংকট, জায়গার স্বল্পতা, গ্যাস সংযোগের অভাব, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানাবিধ কারণে খুলনার শিল্পোন্নয়নে প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারেনি সংস্থাটি। ফলোশ্রুতিতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বিসিক শিল্পনগরী শিরোমণির প্রত্যাশিত কলেবর বাড়েনি।
শিল্পনগরীর শিরোমণি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শিল্পনগরীতে ২৪০টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে শিল্প ইউনিট ৮৪টি। চালু রয়েছে ৭০টি ইউনিট। বাকি ১০টি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর নির্মাণাধীন রয়েছে ৪টি ইউনিট। আপাতত শিল্পনগরীতে কোন প্লট খালি নেই।
বিসিক খুলনার শিল্পনগরী কর্মকর্তা মোঃ খাইরুল ইসলাম দৈনিক খুলনা গেজেটকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর খুলনার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত ও সহজতর হয়েছে। এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরির সম্ভাবনা, চাহিদাও বেড়েছে। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্লট এবং জায়গার স্বল্পতার কারণে শিল্পনগরীর সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা প্লট নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও প্লট স্বল্পতার কারণে তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রুগ্ন ও বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেকগুলি কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া। অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান এ কারণেই রুগ্ন হয়ে যায়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের মালিক মারা যাওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের যোগ্য উত্তরসূরীর অভাবে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে শূন্যতা দেখা দেয়। যোগ্য উত্তরসূরীর অভাবে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়। এছাড়া আর্থিক সংকটের কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প উদ্যোক্তার সুষ্ঠু ম্যানেজমেন্টের অভাবেও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে যাওয়ার কারণ।
তিনি বলেন, “শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ডিফল্টার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়? আর মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরে জটিলতা তৈরি হয়।”
তিনি আরো বলেন, “বিসিক শিল্পনগরী, শিরোমণির শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটির রয়েছে। তার সভাপতি খুলনা জেলা প্রশাসক মহোদয়। ওই কমিটির সুপারিশ ছাড়া কেউ প্লট বরাদ্দ নিতে পারে না। বিসিক শিল্পনগরী/শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনার একটা নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালার শর্তপূরণ সাপেক্ষে একজন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে শিল্প প্লটের জন্য আবেদন করতে হয়। বিসিক শিল্পনগরী/শিল্পপার্কের শিল্প প্লট বরাদ্দ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৩ অনুযায়ী আবেদন করতে হয়।”
তিনি বলেন, “শিল্পনগরীতে গ্যাস সংযোগ না থাকার একটা ঘাটতি ছিল, যেটা ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্যাসের সংযোগ লাইন বিসিক শিল্প নগরী পর্যন্ত চলে এসেছে। যে সকল শিল্প প্লটের মালিকেরা গ্যাস সংযোগ নিতে ইচ্ছুক, তাদেরকে এনওসি দেওয়া হয়েছে। এনওসির সত্য অনুযায়ী তারা গ্যাস সংযোগ নিতে পারবে। গ্যাস সংযোগ পেলে তাদের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।”
জানা যায়, শিল্পনগরীতে উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হ্যামকো ব্রান্ডের দুই প্রতিষ্ঠান আব্দুল্লাহ ব্যাটারি কোঃ প্রাঃ প্রাইভেট লিমিটেড ও খোরশেদ মেটেল ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়াও রয়েছে আয়শা ফ্লাওয়ার মিল এন্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ এর অটো রাইস মিলস, জুট স্পিনার্স লিমিটেড, জামান ফাউনন্ডি, বেঙ্গল এন্ড কোং, এস এম ইঞ্জিনিয়ারিং, তারক এন্ড পরশ ফ্লাওয়ার মিল, মিতালী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
খুলনা গেজেট/এনএম