বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

ডুমুরিয়ায় পানিবন্দি ৪ মন্দিরে এবার হচ্ছে না দুর্গাপূজা, ৮টিতে ভক্তরা যাবেন ডিঙি চড়ে!

সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া

দেখলে মনে হবে এটা ডিঙি নৌকা রাখার ঘাট। কিন্তু আসলে তা নয়। দীর্ঘ দু’মাস পানিতে এভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষ্ণনগর সার্বজনীন হরিগুরু পূজা মন্দির। নিয়মিত পূজা অর্চনা করতে বিঘ্নিত হচ্ছে এ মন্দিরে। এরকম পরিস্থিতি রয়েছে আরো ৩টি মন্দিরে। এসব মন্দিরে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব হচ্ছে না। তবে পানিবন্দি থাকার পরও ৮টি মন্দিরে যথারীতি পূজা হচ্ছে। সেখানে ডিঙি চড়ে প্রতিমা দর্শনে যাবেন ভক্তরা।

জানা যায়, প্রায় দু’মাস পানিবন্দি বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া উপজেলার উত্তরাঞ্চীলয় এলাকাসমূহ। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে কৃষ্ণনগর, মুজারঘুটা, বারানসি ও বটভেড়া গ্রাম। এসব এলাকার অনেক জায়গায় এখনো বসতবাড়ি ও রাস্তা-ঘাটে হাটু পানি রয়েছে। অত্যন্ত কষ্টকর এবং যন্ত্রণাদায়ক জীবন-যাপন এ অঞ্চলের মানুষের। প্রতিকূল এ পরিস্থিতির মধ্যে বেজে উঠেছে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনি মঙ্গলবার্তা। গতকাল রবিবার মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

গতকাল রবিবার সকালে কৃষ্ণনগর এলাকায় সরেজমিনে পানিবন্দি মন্দিরগুলো দেখতে যান খুলনা গেজেট প্রতিবেদক। এলাকার প্রতিটা মন্দির রয়েছে পানিবন্দি। কৃষ্ণনগর সার্ব্বজনীন হরি মন্দির চত্বর পানিতে তলিয়ে আছে দীর্ঘদিন। সেখানে দেড় থেকে দুই ফুট পানি। কচুরিপানা আটকে থাকায় মনে হচ্ছে এটা কোন এক জলাশয়। শুধু তাই নয়, মন্দির চত্বরে অনেকগুলো ডিঙি নৌকা রাখা আছে। দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটা মন্দির প্রাঙ্গণ। খাল-বিলের সাথে একাকার মন্দির হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষ্ণপদ মন্ডল জানান, মন্দির চত্বরে প্রায় কোমর পানি উঠেছিলো। পানি নামতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি পানি কমেছে। ১ ইঞ্চি পানি কমতে ৬/৭ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। এখনো অনেক পানি। যার কারণে হরি মন্দিরে এবার দুর্গাপূজা হচ্ছে না।

ডাকাতিয়া বিলের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে কৃষ্ণনগর গ্রামটি। গ্রামটি প্রায় ৫ কিলো দুরুত্ব। এর একটি মাত্র পথ। যা পানিতে নিমজ্জিত। কৃষ্ণনগর মধ্যপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির চত্বরে বালি দিয়ে উচু করার চেষ্টা করছে কর্মীরা। ওই মন্দিরের পাশে নৌকা গড়ছে দিপক নামের এক মিস্ত্রি। তিনি জানান, এবার দুর্গা পূজার আনন্দ তাদের পানিতে মিশে গেছে। ঘর থেকে বের হলেই যেদিকে তাকাই সেদিকে পানি। যে অবস্থা হয়েছে তাতে পূজা দেখতে এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে তেমন কেউ যাবে না। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারণে পানি পচে দুর্ঘন্ধ হচ্ছে এবং ঘর-বাড়িতে বিষাক্ত সাপের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। যার কারণে ডিঙি নৌকা ছাড়া পূজা মন্দিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। তাও দিনের বেলায়।

এ বছর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে ২১২টি সার্বজনীন পূজা মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধামালিয়া ইউনিয়নে ৯টি, রঘুনাথপুরে ২১টি, রুদাঘরায় ১২টি, খর্ণিয়ায় ১৫টি, আটলিয়ায় ২৫টি, মাগুরাঘোনায় ৮টি, শোভনায় ১৭টি, শরাফপুরে ১২টি, সাহসে ৭টি, ভান্ডারপাড়ায় ১৪টি, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নে ১২টি, রংপুরে ২৬টি, গুটুদিয়ায় ১৭টি ও মাগুরখালী ইউনিয়নে ১৭টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। পানিবন্দি ৮টি পূজা মন্দিরের ৫টি কৃষ্ণনগর, ২টি মুজারঘুটা ও একটি বারানসি গ্রামে পূজা হচ্ছে এবং কৃষ্ণনগর গ্রামের ১টি ও মুজারঘুটা গ্রামে ৩টি মন্দিরে এবার পূজা হচ্ছে না।

উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ কুন্ডু টুটুল জানান, এ বছর পানিবন্দির কারণে কয়েকটা এলাকায় পূজা হচ্ছে না। তবে পূজা অনুষ্ঠানের মন্দিরের সংখ্যা বেড়েছে। ২১২টি মন্দিরে এবার দুর্গাপূজা হবে। যা গতবছর ছিলো ২০০টি। শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজের দিক নির্দেশনানুযায়ী পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটা মন্দির বাধ্যতামূলক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের সমন্বয়ে মন্দির এলাকা বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন