বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে চোখে ভাসে ভাড়া করা বাড়িতে রঙচঙে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষ। সেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব, প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই বিজ্ঞান শেখানোর চেষ্টা চলে। প্রতিষ্ঠান জুড়ে চাকচিক্য থাকলেও সঠিক শিক্ষাদানের অভাব সেখানে প্রকট।
পুরানো সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি খুলনা। এখানে রয়েছে বিশ্বমানের রোবোটিক্স ল্যাব, যা দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই। প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য এক ছাদের নিচেই স্থাপন করা হয়েছে লেদ মেশিন, শেপার মেশিন, মিলিং মেশিন, সারফেস গ্রাইন্ডার মেশিনসহ অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা রয়েছে।
এছাড়া আর্ক ওয়েল্ডিং, মিগ ওয়েল্ডিং ও গ্যাস ওয়েল্ডিংসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং শিল্প কারখানায় সরাসরি কাজ করার মতো দক্ষ হয়ে উঠছে।
ব্যতিক্রমী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান খানজাহান আলি থানার খুলনা-যশোর মহাসড়কের শিরোমণি নূরজাহান টাওয়ারে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। প্রায় ৩৫ একর বিস্তৃত জায়গা উপর তেলিগাতী মৌজার তেলিগাতী বাইপাস মহাসড়কের পাশে মনোরম পরিবেশে মূল ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, নিয়মানুবর্তিতা, জ্ঞান ও নৈতিকতা এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৩ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি বিভাগে ১৫টি সেকশনে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৩১ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া দৈনিক খুলনা গেজেটকে বলেন, “বিশ্বায়নের এই যুগে ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। আর এ কারণেই বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব। নিশ্চিত কর্মসংস্থানের একমাত্র এবং পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে সুযোগ সৃষ্টি ও দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে সেরা, স্মার্ট ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রকৌশলী তৈরীর মিশন নিয়ে কাজ করছে খুলনা আর্মি ইউনিভার্সিটি”।
তিনি বলেন, “আর্মি ইউনিভার্সিটিতে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতি ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি রয়েছে অনেক প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে নেই। এখানে যে রোবোটিক্স ল্যাবটি রয়েছে এটি বাংলাদেশের অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিগুলোতে নাই। এটি একটি অ্যাক্টিভেটেড ল্যাব। এটার যন্ত্রপাতি জার্মানিতে তৈরি। শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশনের জন্য যা প্রয়োজন তা শিখতে পারবে। রয়েছে এনভারমেন্ট ল্যাব। নতুন ইউনিভার্সিটির জন্য এটি একটি চমৎকার ল্যাব। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাব হলেও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ল্যাবটি ব্যবহার করে থাকে। আমরা ছাত্রদের প্রত্যেকটা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পদ্ধতি হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকি।
এখানে নিজস্ব পরিবহণ ও আবাসিক হল ফ্যাসিলিটি, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত ল্যাব, দক্ষ প্রশিক্ষক, গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ তথা বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ। এছাড়া এখানে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, সিএমএইচে মেডিকেল ফ্যাসিলিটিসহ আরো অন্যান্য সুবিধা”।
তিনি বলেন, “আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ইউনিভার্সিটির ৬ টি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে প্রকৌশল বিভাগ চারটি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বাকি দুইটি ইংরেজি ও বিবিএ। আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আরও নতুন নতুন ফ্যাকাল্টি চালু করা হবে”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর নাদিম রেজা খন্দকার বলেন, “জীবনের অধিকাংশ সময় প্রফেসর ও রিসোর্স নিয়ে আমেরিকাতে কাটিয়েছি। বাংলাদেশে এসে ঢাকায় শীর্ষ দুইটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছি। খুলনায় এসে আর্মি ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছি। এখানে একটা ডিসিপ্লিন আছে, রিসোর্স আছে। আর্মি হ্যাজ ফুললি সাপোর্টেড দিস ইউনিভার্সিটি ল্যাব। রিসোর্স ফ্যাসিলেইট করার জন্য এখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যে ইকুইপমেন্টগুলো আছে, খুলনার প্রায় সব চাহিদা, সেগুলো মেটাতে পারবে। ওয়ার্ল্ড ক্লাস রিসোর্স প্রোগ্রাম কোড সাপোর্ট করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী, মোঃ সায়েম ইবনে ইব্রাহীম বলেন, “এখানে হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করছি, আধুনিক ল্যাব সুবিধার কারণে আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা অনেক বেড়েছে। এখানকার প্রোজেক্টগুলো আমাদের উদ্ভাবনী কাজে অনুপ্রাণিত করছে”।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী শুকরান হামিদ দুর্বার বলেন, “এখানে যে সমস্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি আছে সেগুলো অনেক পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে দেখতে পাওয়া যায় না। আমাদের টিচার যারা আছেন তারাও ট্যালেন্টেটেড। আমাদের এখানে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিল্প খাতে সরাসরি কাজ করার জন্য এই প্রশিক্ষণ আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে”।
খুলনা গেজেট/এনএম