বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়। সারা বছর ধরে খাদ্য বিভাগ ওএমএস পদ্ধতিতে চাল বিক্রি করছে। সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিমাসে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আসছে। পাকিস্তান থেকে চাল এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সরকার আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। রাইস মিলগুলোতে অস্বাভাবিক মজুদ নেই। জেলার ১০টি খাদ্য গুদামে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে। এত কিছুর পরও বাজার মূল্য অস্বাভাবিক। প্রতি কেজি চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৫৩ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মে মাসে শেষ হওয়া বোরো মৌসুমে জেলায় ৩ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়। কৃষি অধিদপ্তরের ভাষ্য বাম্পার ফলন। খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড, ২টি পৌরসভা ও ৯ উপজেলায় সপ্তাহে ৫দিন ওএমএস পদ্ধতিতে চাল বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দৈনিক এক মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থাকে। নতুন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত এভাবে বিক্রি অব্যাহত থাকবে। জুলাইতে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা হয়। বেনাপোল ও ভোমরা শুল্ক স্টেশন থেকে জুন-আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়।
স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কর্পোরেট হাউজগুলো ও অটো রাইস মিল মালিকরা ধান কিনে মজুদ করেছে। বাজার এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। বোরো মৌসুমে ধান কিনে মজুদ করে রাখা চাল এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা জিম্মি হয় পড়েছে। কর্পোরেট হাউজের বড় পুঁজির কৃষক, মিল মালিক ও ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
খুলনা জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ জাকির হোসেন তথ্য দিয়েছেন, ওএমএস পদ্ধতিতে চাল বিক্রি করায় বাজার নিম্নমুখী।
তিনি বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মজুদ স্বাভাবিক। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী মোটা চাল কেজি প্রতি ৫৩-৫৫ টাকা, মাঝারি ৫৭-৬১ টাকা, আতপ চাল ৪৮-৫০ টাকা, চিকন চাল ৭৩-৭৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বড় বাজারের অন্নপুণ্য ট্রেডার্স ও হালিম ভান্ডারের মালিকেরা বলেছেন, মোটা (সিদ্ধ) কেজি প্রতি ৪৭-৫০ টাকা, আমদানিকৃত ৫০-৫৬ টাকা, মোটা আতপ ৪২-৪৫ টাকা, চিকন ৫০-৫৪ টাকা, দেশি চিকন ৫৪-৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নতুন বাজারের ব্যবসায়ী জানান, পাইজাম চাল কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া গ্রামের কৃষক মোজাহের আলি জানান, কৃষকরা ধান কেটেই বিক্রি করে দেয়। কর্পোরেট হাউজরা বোরো মৌসুম শেষে ধান কিনে মজুদ রাখে। বড় মিল মালিক ও কর্পোরেট হাউজের কারসাজির কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট ধানের প্রায় ৫৫ শতাংশ বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কাগজ কলমে বোরো আবাদের জমির পরিমাণ বেশি এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেখিয়ে প্রশংসা কুড়ায়।
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল হোসেন অপর এক গণ মাধম্যকে বলেছেন কৃষি পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে খুশি করার জন্য কৃষি বিভাগ জমির পরিমাণ কাল্পনিকভাবে দেখায়।
ক্ষমতার পালা বদলের পর আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয় এনবিআর। চাল আমদানির ক্ষেত্রে কেবল ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রযোজ্য থাকছে। তাও কমিয়ে ২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনবিআরের ঘোষণায় বলা হয় আমদানি ব্যয় কেজি প্রতি ১৪টাকা ৪০ পয়সা কমবে। ভারত ও পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করার পর এখনও বাজার চড়া।
খুলনা গেজেট/এনএম