ছিল সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ডিও লেটার। ইট ভাটায় যাতায়াতের জন্য নদীতে নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজ। রাত-দিন বহন করা হচ্ছে ট্রাক-লরিতে ইট। নেওয়া হয়নি কোনো দপ্তরের অনুমতি। নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত অপরিকল্পিত বল্লি ও পিলার। ফলে ভরাট হচ্ছে নদী। এসব নদীর মৃত্যু হলেও প্রশাসনের চোখ বন্ধ।
গোলাপদহ ও বাগআচড়ার মাঝ থেকে বয়ে গেছে ভদ্রা নদী। এ নদীর পূর্ব তীরে বাগআচড়া অংশে রিপা ব্রিক্স। যার বর্তমান মালিক আমিনুর রহমান। পৈত্রিক বাড়ি তালা উপজেলার শিরাশুনী গ্রামে। ব্যবসায়িক কারণে তিনি এ ভাটাটি লিজ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচালনা করছেন। পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় তিন বছর আগে ওই নদী খনন হয়। ফলে রিপা ভাটাটির ইট বহন ও যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভাটার মালিক আমিনুর নিজ অর্থে ব্রিজ নির্মাণ করেন। তার দাবি, খরচ এক কোটি টাকা। সাবেক মন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে, দাবি তার। তবে সরকারি কোনো দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি।
নিজ ভাটার ইট বহনে শোলমারী নদীতে কাঠের ব্রিজ নির্মাণ আরও ভয়াবহ। তেরখাদার বাসিন্দা প্রফুল্ল রায় কয়েক যুগ আগে কৈয়া বাজারে আসেন। প্রথমে বাজারের পাশে ইটভাটা তৈরি করেন। বেশকয়েক বছর শোলমারী নদীর ওপারে নদীর চরে গড়ে তোলেন বিশাল ইটভাটা। কিন্তু নির্বিঘ্নে যাতায়াতে অন্তরায় হয়ে পড়ে নদী। ফলে নির্মাণ করেন কাঠের ব্রিজ।
প্রফুল্ল রায়ের দাবি, এ কাঠের ব্রিজ নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে পঞ্চাশ লাখ টাকা। বড় বড় গাছের গুড়ি নদীতে পুঁতে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এটা। ধান গাছের মত ঘন কাঠের গুড়ি পোতা নদীতে। ফলে ওই নদী এখন মৃত।
শোলমারী ভরাট হওয়ায় বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ গত বছর ওই ব্রিজ নির্মাণের বিরুদ্ধে নালিশ করে প্রশাসনের কাছে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ব্রিজ অপসারণের উদ্যোগও নেন। ভাটা নির্মাতা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যে অদৃশ্য কারণে সব কিছু থেমে যায়।
খড়িয়া গ্রামে রয়েছে মাস্টার ব্রিকস নামক ইটের ভাটা। ওই ভাটার পাশে পঞ্চু নদী প্রবহমান। ভাটার পূর্বপাশে পঞ্চু গ্রাম। গ্রামের পাশে ওই ভাটার ৫টি মিল রয়েছে কাঁচা ইট প্রস্তুতের জন্য। নদী পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছে আড়াআড়ি কাঠের ব্রিজ।
এসব অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ করায় ভাটা মালিকরা লাভবান হলেও অধিকাংশ নদী ভরাট হচ্ছে। তবে একের পর এক এসব ব্রিজ নির্মাণ হলেও প্রশাসনের চোখ বন্ধ রয়েছে। ইট ভাটার প্রয়োজনেই এসব ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, এমন দাবি এলাকাবাসীর। তবে এ তিন ভাটার মালিকের দাবি, ব্যবসায়িক কারণের সাথে জনগণের যাতায়াতের প্রয়োজনে এসব ব্রিজ নির্মাণ।
তবে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেছেন এসব ব্রিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। নির্মাণের সময় কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত বছর শোলমারী নদীর ব্রিজের টোল আদায় বন্ধ করা হয়। রিপা ব্রিকস-এর সামনের ব্রিজটি নির্মাণের সময় বাঁধা দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী এক নেতার ক্ষমতা ব্যবহার করে এটি নির্মাণ করেছেন। খড়িয়ার ব্রিজ সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।
ডুমুরিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সর্দার খুলনা গেজেটকে বলেন, “গোলাপদহ থেকে সালতা খনন শেষ হয়েছে ৩ বছর। খনন চলা অবস্থায় আমিন সাহেব তার ভাটায় যাওয়ার জন্য ব্রিজ নির্মাণ করেন। ব্রিজের কারণে নদীতে কোনো নৌকা চলতে পারে না। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় অল্পদিনে নদীতে পলি পড়ে ভরাট হতে চলেছে।”
গুটুদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ তুহিন বলেন, “শোলমারী নদীতে প্রফুল্ল বাবু অত্যন্ত ঘন ঘন গাছের গুড়ি দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এখন আমরাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি।
খুলনা গেজেট/এনএম