গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের নেতৃবৃন্দ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে সাক্ষাত করে অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা প্রয়োজনে মানববন্ধনসহ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন।
দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে কার্যালয়ে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা জানায়, সীমানার ভেতরে অবস্থিত ১০.৩৫ একর আয়তনের এ খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে আছে। বর্তমানে খুবির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি হলেও হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। ফলে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র সমস্যা তৈরি করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এছাড়া দাবি আদায়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে জমি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে পত্র দেয়।
এক পর্যায়ে চলতি বছরের মার্চে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনা সফরকালে ক্যাম্পাসে আসলে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। তিনি দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ‘শহীদ মীর মুগ্ধর দাবি’ হিসেবে গণ্য করে সমাধানের আশ্বাস দিলেও বিষয়টি ঝুলে থাকে।
দীর্ঘ চার মাসেও যৌক্তিক এই দাবি বাস্তবায়নে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কর্মসূচি ঘোষণা করে গত ১০ আগস্ট গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের প্রশাসনিক ভবনকে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে অফিসিয়াল কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সভাপতিত্বে এক পর্যালোচনা সভা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ তাঁদের বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন ও ফিল্ড ল্যাব হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার্থে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে হস্তান্তর করা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন যে, খামারটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সভায় মৎস্য অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারা খামারটি স্থাপনের প্রেক্ষাপট ও এর কার্যক্রম অবহিত করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবের পরামর্শে বিষয়টি পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ১৫ সদস্যের একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। যার আহবায়ক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও সদস্য সচিব একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মৎস্য-১ শাখা)। এছাড়া খুবি ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ও তিনজন শিক্ষার্থী রয়েছেন ঐ কমিটিতে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। উপদেষ্টা কর্তৃক গত ২৬ আগস্ট স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটির ঢাকার সদস্যরা খ্বু শিগগিরই খুলনায় আসবেন বলে জানা গেছে। সেসময় খুলনা উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান খুলনা গেজেটকে জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভে বাস্তবতার আলোকে মৎস্য খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দীর্ঘ তিন যুগেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই নতুন করে কোন অজুহাত খুলনাবাসী আর শুনতে চায় না। প্রয়োজনে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম