Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ৭ই আগস্ট, ২০২৫ । ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
চলছে বর্ষা মৌসুম

তেরখাদার শেখপুরা হাটে বিক্রি লাখ লাখ টাকার নৌকা!

তেরখাদা প্রতিনিধি

তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউনিয়নের শেখপুরা বাজার। আঠারোবেকি নদীর পাড় ঘেঁষা এই ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরোনো হাটটি আজও টিকে আছে ‘নৌকার বাজার’ নামেই। এক সময় পানিপথে আসা নৌকার মেলা এখন রূপ নিয়েছে সড়কপথ নির্ভর একটি মৌসুমি বাণিজ্যে। তবে চাহিদা কমেনি একটুও, বরং বাড়ছে প্রতিদিন।

শুক্রবার হাটের দিন। সকাল থেকেই বাজারে ভিড় জমে যায়। খুলনা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাটসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ ছুটে আসেন কাঙ্খিত নৌকা কিনতে। আকারভেদে এসব নৌকার দাম ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে হলেও ভালো মানের নৌকা বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে।

এ অঞ্চলে মাছ ধরা, ফসল আনা-নেওয়া, পারাপারসহ নানান কাজে এখনো নৌকার ব্যবহার অপরিহার্য। তাই চলতি বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তীব্র হয়ে উঠেছে নৌকার চাহিদা। এই তিন মাসেই জমে ওঠে শেখপুরার নৌকার হাট।

শুক্রবার (১ আগষ্ট) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাটে ৬০ থেকে ৭০টি পর্যন্ত নৌকা বিক্রি হয়। এসব নৌকার বেশিরভাগই আসে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে। কেউ জলপথে, কেউবা সড়কপথে ভ্যান কিংবা নছিমনে করে নৌকা এনে সাজিয়ে রাখেন হাটে।

বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ অলিয়ার শেখ শেখপুরা হাটে এনেছিলেন ২২টি নৌকা, বিক্রি হয়েছে ৮টি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নৌকায় গড়ে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছে।’

একই এলাকা থেকে আসা হাসান জানালেন, তাঁদের পরিবার তিন পুরুষ ধরে নৌকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মেহগনি কাঠ দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করেন নৌকা, এরপর শেখপুরা হাটে নিয়ে বিক্রি করেন।

তেরখাদা উপজেলা সদরের নৌকা কারিগর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জয়সেনা বাজারে নৌকা তৈরি করি। সারা সপ্তাহে যত নৌকা বানাই, সব বিক্রি করি শেখপুরা হাটে। মাঝে মাঝে অর্ডারেও কাজ করি।’

শেখপুরা হাটের ইজারাদার মোল্লা এস্কেন্দার জানান, ‘ক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ৬ টাকা হারে খাজনা নেওয়া হয়। গড় হিসেবে প্রতিটি নৌকার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খাজনা আদায় হয়। তবে গরিব হলে অনেক সময় মাফও করে দিই।’ তাঁর ভাষায়, ‘একটি মৌসুমে এখানে প্রায় ৪০ কোটি টাকার নৌকা কেনাবেচা হয়। হাট জমে ওঠে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।’

তবে এই বাজার শুধু ব্যবসা নয়, তৈরি করছে ব্যাপক কর্মসংস্থানও। গাছ কাটা, কাঠ সরবরাহ, স’মিল, কারিগর, পরিবহন, বিক্রয়, এমনকি ব্যবহারকারী পর্যন্ত অন্তত আট ধাপে যুক্ত থাকছেন শ্রমজীবীরা। হাটকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকান, খাবারের হোটেল, যন্ত্রাংশসহ নানা পণ্যের বিক্রিও বাড়ে।

নৌকা কিনতে আসা তেরখাদা সদরের পশ্চিমপাড়া এলাকার পরিমল বৈরাগী জানান, মাছ ধরার কাজে তিনি একটি নৌকা কিনেছেন ৮ হাজার টাকায়। তিনি জানান, ‘নৌকা ছাড়া আমাদের এলাকার চলাচলই বন্ধ হয়ে যায় বর্ষায়।’

গ্রামীণ জীবনযাত্রা আর অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে শেখপুরার নৌকার হাট। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলালেও, এখানকার মানুষের জীবনধারায় নৌকার কদর আজও অমলিন।

খুলনা গেজেট/এসএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন