তেরখাদা উপজেলায় চিত্রা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ, ডাকবাংলো ও থানা ভবনের পেছনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বর্ষার পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় নদীভাঙন আগেভাগেই শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্মৃতিচিহ্ন ও সরকারি স্থাপনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে চিত্রা নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও স্রোতের গতি বেড়েছে বহুগুণ। এর প্রভাবে ইতোমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও ডাকবাংলোর আশপাশের এলাকায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ের মানুষজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম আতঙ্ক।
উপজেলা সদরের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দিন আহমেদ এবং ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার বাপ্পি মোল্লা খুলনা গেজেটকে জানান, নদী খননের পর থেকে পানির গতি বেড়ে গেছে। প্রতিবছরই ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এবার বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভাঙন শুরু হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।
শুধু স্মৃতিস্তম্ভই নয়, বসতবাড়িও হারাচ্ছেন অনেকে। তেরখাদা ব্রিজের পাশে বসবাসরত স্কুল শিক্ষক সাঈদ শেখের বাড়ি সম্প্রতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি বাধ্য হয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।
স্থানীয় মোল্লা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার বাড়ির একদম পাশে নদী। পানি বাড়লেই ভাঙন শুরু হয়। জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ঠেকানো গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছরই নতুন করে ক্ষতি হচ্ছে।’
গত কয়েক বছরে ভাঙনের ফলে তেরখাদা সদর ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য দোকান, মাছের ঘের, পশুর খামার নদীতে হারিয়ে গেছে। দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে বসতির পরিধি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবো বরাবরই শুধু সাময়িক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভাঙন রোধে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প না থাকায় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।
তাদের দাবি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ, থানা ভবন ও ডাকবাংলোর মতো ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নয়তো অচিরেই এই স্মৃতিচিহ্নগুলো ইতিহাসে পরিণত হবে, চোখের সামনে নদীতে হারিয়ে যাবে এলাকার অস্তিত্ব।
খুলনা গেজেট/এনএম