খুলনা ওয়াসার কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম আব্দুল গফফার। খুলনা ওয়াসার নকশাকারক পদে চাকুরী করেন। গত ১৫ বছরে তিনি কিছুর নকশা করেছেন-এমন নজীর নেই। দাপ্তরিক কাজও করেন কালেভদ্রে। সারাদিনই তাকে ব্যস্ত দেখা যায়, আউটসোর্সিংয়ে কর্মচারী নিয়োগ, মাস্টাররোল কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি, বদলি, আবাসন বরাদ্দ ও টেন্ডারবাজির মতো নানা কাজের তদবিরে।
এই অভিযোগগুলো ওয়াসার অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। গতবছর অভ্যুত্থানের পর আবদুল গফফারের প্রভাব আরও বেড়েছে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে জোট বেঁধে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের হেনস্তা, ছাত্রদের ডেকে এনে পরিকল্পতাভাবে মব তৈরি, পত্রিকায় ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ তৈরি করে চাপে রেখে অন্যায্য দাবি আদায়সহ নানা অপকর্ম শুরু করেন। বিভিন্ন অনৈতিক দাবি পূরণে কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ারও ঘটনা ঘটছে অহরহ। তাদের অপতৎপরতায় ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের ভেতরে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, গফফারের নিয়োগ হয়েছিল পাম্প অপারেটর পদে। এরপর চাকরি নকশাকারক পদে আত্তীকরণ হলেও তিনি পাম্পচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি প্রভাব খাটিয়ে পাম্প থেকে প্রধান কার্যালয়ে চলে আসেন। জোট বাধেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত কর্মচারীদের সঙ্গে। এর আগে ১১ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব ব্যবহার করে কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।
গতবছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চাপের মুখে পড়েন ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ। বিপুল অংকের টাকা নিয়ে তাকে প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ বাড়াতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তারা। মোটা অংকের টাকা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু আবদুল্লাহর অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ শুরু হলে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এরপর দরপত্র, বদলী ও পদোন্নতি বাণিজ্যে মনযোগ দেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা হওয়ার পর থেকে আবদুল গফফার নিয়মিত অফিস করেন না। হাজিরা খাতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি গত ২৬ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত সেখানে স্বাক্ষর করেননি। অফিসে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন ওয়াসার কর্মকর্তা (অর্থ ও প্রশাসন) ঝুমুর বালা বিশ্বাস; কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল ওয়াসা ভবন থেকে মোটরসাইকেলযোগে খালিশপুর চরের হাটের আঞ্চলিক অফিসে যাওয়ার সময় তাকে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষরা। ওইদিন তিনি দাবি করেন, ‘অফিসের একজন কর্মচারীর বদলিকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের দিয়ে তার উপর হামলা চালানো হয়েছে।’ এ ঘটনায় তিনি ৫জনকে আসামি করে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে চারজনই ওয়াসার কর্মচারী।
মামলার আসামি ওয়াসা কর্মচারী ইমামুল ইসলাম, কাজি মোঃ ইলিয়াজ হোসেন, সরদার সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল্লাহ বাবু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জিএম আব্দুল গফফার মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সূত্র জানায়, বদলী পদোন্নতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সম্প্রতি টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িয়েছে আবদুল গফফার। ছোট খাটো সরবরাহের কাজ পাইয়ে দিয়ে টাকা আদায় শুরু করেন। কাজ না দেওয়ায় বেশ কয়েকবার কর্মকর্তাদের হুমকিও দেন। দপ্তরে ঢুকে হেনস্থা করা এখন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জি এম আব্দুল গফ্ফার বলেন, প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। ওয়াসার চারটি অফিস রয়েছে, সেসব অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখতে হয়। এজন্য মাঝে মাঝে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারিনা। এটা কোন বিষয় না। আজ দুপুরে না খেয়ে সচিব স্যারের সাথে কাজ করছি। আপনি এসে দেখে যেতে পারেন।
কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতি ও নিয়মিত াফিস না করা সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমি তিনদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। এখনও অফিসে যাইনি। আজ বিকালে অফিসে গিয়ে বিষয়গুলো খোজ নেব। অফিসে কোন অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখছি।
খুলনা গেজেট/হিমালয়