পুকুর থাকলেও পাড় নাই। তৎপরতা না থাকায় রাস্তা নামক পাড়ের বিস্তর ধ্বসে পুকুরের পেটে রাস্তা হচ্ছে বিলীন। যশোর সদরের বসুন্দিয়ার প্রত্যেক গ্রামে রাস্তার ধারে খনন করা পুকুরগুলোর কারণে রাস্তা ভেঙে ধসে পড়ার এরকম চিত্র প্রতিদিন চোখে পড়ছে।
এমনকি অপরিকল্পিত এসব রাস্তার অর্ধেকটাই কোথাও কোথাও পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব রাস্তা বা সড়ক অল্প দিনের মধ্যেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারের প্রতিবছর রাস্তা মেরামতে লাখ লাখ টাকা জলে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলেন, “সরকার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করে। কিছুদিন না যেতেই এসব রাস্তা গিলে ফেলে পুকুরে। অল্প অল্প করে ভাঙতে ভাঙতে একসময় পুরো রাস্তা বিলীন হয়ে যায় পুকুরে। এতে জনসাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বছরের পর বছর এসব ভাঙা রাস্তার আর মেরামত হয় না। পুকুর ধারে রাস্তা ভাঙনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিরা নেননি কোন পদক্ষেপ। ফলে অবাধে খনন হওয়া পাড় বিহীন পুকুর গুলোর কারণে একদিকে জনদুর্ভোগ বাড়ে অন্যদিকে সরকারের অপচয় হয় কোটি কোটি টাকা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ২৪ সালে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত সড়কের পাশে পুকুর ও নালা খনন করা হচ্ছে। সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর, কূপ, মাটি বা সেচ নালা ইত্যাদি খনন করলে সড়কের পার্শ্ব-ঢাল এবং আড়ি-ঢাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সড়কের সীমানার বাইরে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম হাতে নেওয়া যায়। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গ্রামীণ সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর, সেচনালা খনন করা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি রাস্তার ধার ঘেঁষে পুকুর/খাল/কূপ/সেচনালা তৈরি করলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নিজ খরচে সুরক্ষা ঢাল নির্মাণ করবেন। এ সংক্রান্ত কতিপয় আইন/বিধি-বিধান স্মরণ করে দেওয়া হয় নির্দেশনায়। দ্য বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২ এর ৩ ধারা অনুসারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো পুকুর খনন বা পুনঃখনন করা যাবে না।
যদি কেউ এমনভাবে পুকুর বা সেচনালা ইত্যাদি খনন করেন যার ফলে ভূমির বা সড়কের বা পথের ব্যবহার বা ভোগদখলের ক্ষেত্রে কোনরূপ অসংগত অসুবিধার সৃষ্টি করে তাহলে কর্তৃপক্ষ দ্য বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২ এর ৩ ধারার (৩) উপধারা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে তা অপসারণ, খনন বা পুনঃখণন বন্ধ বা ভরাট করার আদেশ দিতে পারেন।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর বিধি ২৮ অনুযায়ী নিজ ভূমির কমপক্ষে ১০ ফুট অভ্যন্তরে পুকুর বা জলাশয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ সরকারি রাস্তার সীমানার কিনারা হতে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরত্বে এবং ৪৫ ডিগ্রি ঢালে পাড় রেখে পুকুর/জলাশয় খনন করতে হবে।
সরকারি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমি ও ইমারত (দখল পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ-১৯৭০ এর ধারা-৫ অনুযায়ী অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমির উপর পুকুর নালা বা পুকুর খনন বা পুনঃখনন করলে জেলা প্রশাসক উক্ত নালা বা পুকুর ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণের আদেশ দিতে পারেন।
খুলনা গেজেট/এনএম

