বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

ফেসবুক পোস্টে বোন ফিরে পেলো হারানো ভাইকে

গেজেট প্রতিবেদন

চুয়াডাঙ্গার এক শিক্ষকের উদ্যোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে প্রায় ২ মাস আগে হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইকে ফিরে পেলেন তার বোন। মানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের হুলিয়ামারী গ্রামের গোলাপনগর এলাকায়।

বুধবার (১ অক্টোবর) ভোর ৬টার দিকে পথচারীরা দেখতে পান শারীরিকভাবে দুর্বল ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি পড়ে আছেন রাস্তার পাশে। কে এই মানুষ, কোথা থেকে এসেছেন, কিছুই জানত না কেউ। কৌতূহলী গ্রামবাসী যখন চারপাশে ভিড় জমাচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বড় সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আহসান হাবীব শিপলু। তিনি অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন এবং ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন।

পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত সাড়া মেলে। স্থানীয় গ্রামবাসী শিশির ও গ্রাম পুলিশ ইসমাঈল হোসেন পোস্টকারী শিপলুর সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে শিক্ষক শিপলু অসহায় ওই ব্যক্তিকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম মো. নাসির উদ্দিন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানাধীন সোনাবাড়িয়া গ্রামের (মৃত) কাশেম সানার ছেলে।

এক পর্যায়ে নাসির উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা শিক্ষক শিপলুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুপুর সাড়ে ১টার দিকে তার বোনসহ স্বজনরা চুয়াডাঙ্গায় এসে তাকে গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত থেকে পরিচয় নিশ্চিত করেন তিতুদহ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন।

আহসান হাবীব শিপলু বলেন, মানুষ মানুষের জন্য- এই বিশ্বাস থেকেই আমি তার পাশে দাঁড়াই। প্রথম দেখায় তিনি ছিলেন অসহায় ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পরিচয় জানার কোনো উপায় ছিল না। তাই ছবি ও তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করি। এরপরই সবকিছু বদলে যায়। সবার সহযোগিতায় তার পরিবার খুঁজে পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো- এক বোন বহুদিন পর তার হারানো ভাইকে ফিরে পেয়েছেন। এ দৃশ্য দেখে আমার নিজেরও চোখ ভিজে আসে। যদি আমার ছোট্ট উদ্যোগে কারও মুখে হাসি ফোটে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষক শিপলুর ফেসবুক পোস্টের কল্যাণেই আজ এক বোন তার ভাইকে দীর্ঘদিন পর ফিরে পেয়েছেন। একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে নজির তিনি স্থাপন করেছেন, তা আমাদের সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ভাইকে ফিরে পেয়ে নাসির উদ্দিনের বোন আনন্দে কেঁদে ফেলেন। স্থানীয়রা এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ভাইকে ফিরে পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বোন গুরবান বলেন, আমরা বহুদিন ধরে আমার ভাইকে খুঁজছিলাম। কোথাও তাকে পাচ্ছিলাম না। আজকে সবার সহযোগিতায় তাকে ফিরে পেয়েছি। শিপলু স্যারকে সারাজীবন মনে রাখব।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পল্লী প্রাণী চিকিৎসক হাসানুজ্জামান রিগান, বায়েজিদ, নীরব, মনিরুল, সোলাইমান শেখ, নিজাম উদ্দিন শেখসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এবং সাতক্ষীরার সোনাবাড়িয়া গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়স্বজনরা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন