জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা মোংলায় বেড়েছে পানির লবণাক্ততা। আর সেই নোনা পানির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে নারীদের শরীরে। দেখা দিচ্ছে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা, কিন্তু সমাধানের পথ সীমিত।
উপকূলের নারীরা শুধু লবণাক্ত পানির সঙ্গে বসবাস করছেন না তারা প্রতিদিন লড়ছেন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে। তাদের কান্না যেন লবণাক্ত জলের স্রোতের মতো অদৃশ্য অথচ প্রবল। এই লড়াই থামাতে এখনই দরকার নিরাপদ পানির টেকসই ব্যবস্থা, নারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা এবং জলবায়ু অভিযোজনের কার্যকর পরিকল্পনা।
যেখানে এক সময় নদী ছিল জীবন, আজ সেই নদীর জলই হয়ে উঠেছে নোনা বিষ।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় আর নদীভাঙনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি পানির উৎস। এখন রান্না, গোসল, এমনকি দৈনন্দিন পরিচর্যায় ব্যবহার করতে হচ্ছে লবণাক্ত পানি। কিন্তু সেই পানিই নারীদের শরীরে আনছে অদৃশ্য আঘাত।
চুলকানি, ঘা, মূত্রনালী সংক্রমণ, অনিয়মিত ঋতু¯্রাব এমনকি জরায়ু ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। চিকিৎসা সীমিত, বিকল্প নেই। নারীরা যেন এক নীরব যন্ত্রণার ভেতর প্রতিদিন বেঁচে আছেন।
চন্দ্রিকা মন্ডল নামে উপকূলের স্থানীয় এক নারী বলেন “পশুর নদীর লবণ পানি ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। রান্না, গোসল সবই এই পানিতেই করি। লবণ জলে শরীর জ¦লে, জীবনও জ¦লে। খাওয়ার পানি পাই না, ডাক্তার তো দূরের কথা।”
নারী উন্নয়নকর্মী কমলা সরকার জানান, “চারদিকে থৈ থৈ পানি, অথচ সুপেয় পানির সংকট তীব্র। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে নারীরা, বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের দুর্ভোগ সীমাহীন।”
পরিবেশ আন্দোলন নেতা বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক নুর আলম শেখ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নারীর শরীরে সবচেয়ে ভয়াবহ। লবণাক্ত পানি শুধু অসুখ আনে না, কেড়ে নেয় মর্যাদা ও জীবনমান। এটা বৈশ্বিক দায়। আমরা উন্নত বিশ্বের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই, আর সরকারের কাছে উপকূলীয় নারীদের জন্য আলাদা বাজেটের দাবি জানাই।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন হাসান জুয়েল বলেন, “গত কয়েক বছরে উপকূলীয় নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা বহুগুণ বেড়েছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ু সংক্রমণ, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগও নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ লবণাক্ত পানি।”
খুলনা গেজেট/এনএম