সকাল বেলায় কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো পড়ছে নদীর বুকে। নৌকা এগিয়ে চলছে সবুজে ঘেরা অরণ্যের ভেতর। হঠাৎ ডালে লাফানো বানর, নদীতে ভেসে ওঠা কুমির। এই দৃশ্যই সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির এবং নানা প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণীসহ প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য শুধু দেশের নয়, বহির্বিশ্বের পর্যটকদেরও টানে।
যে কারণে প্রতিবছর হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসে। বনকে কেন্দ্র করে উপকূলীয়সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের জীবিকা ও দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা অপরিসীম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষিত গাইড সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে সুন্দরবনকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “সুন্দরবনে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, রিসোর্ট ও পর্যটক-সুবিধা তৈরি হলে পর্যটক সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে স্থানীয় মানুষের আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখবে।” পর্যটন বৃদ্ধির পাশাপাশি বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা সমান গুরুত্বপূর্ণ।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, “পর্যটন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব হলো বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা করা। নিরাপদ নৌপথ, সঠিক গাইডিং সেবা এবং সচেতন পর্যটক। এসব মিলিয়ে সুন্দরবনকে টেকসই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা চাই, পর্যটকরা আসুক, কিন্তু বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ যাতে নিরাপদ থাকে সেটা নিশ্চিত হোক।”
স্থানীয় নৌ-চালক রহিম সিকদার বলেন, “পর্যটক বেড়ে গেলে আমাদের আয়-রোজগার ভালো হবে। তবে বন যদি নষ্ট হয়, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
ঢাকার পর্যটক মেহেদী হাসান জানালেন, “প্রকৃতির এমন রূপ আমরা আগে দেখিনি। তবে থাকার ব্যবস্থা, গাইড সার্ভিস ও তথ্যকেন্দ্র উন্নত হলে আরও বেশি মানুষ আসতে পারবে।”
পর্যটক রিয়া করিম বলেন, “সুন্দরবনের প্রকৃতি সত্যিই মুগ্ধকর। তবে বন ও প্রাণীদের রক্ষা করতে সবাই সচেতন হলে ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক হবে। আমি চাই, এখানে আসা প্রত্যেক মানুষ বনের সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে দায়িত্বও নিক।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, প্রত্যেক দর্শনার্থীরও। প্লাস্টিক ফেলা, শব্দদূষণ কিংবা প্রাণীর ক্ষতি থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। তাদের ভাষায়, ‘সুন্দরবন টিকলে পর্যটন টিকবে, আর পর্যটন টিকলেই দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম